সাত মাসে ১৪৫ অবৈধ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর অভিযান আরো জোরদার করা হয়েছে। গত সাত মাসে অন্তত ১৪৫ অবৈধ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আটক অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বেশির ভাগকেই দীর্ঘ সময় রাখা হয় ডিটেনশন সেন্টারে। বিমানযাত্রার সময়ও হাতে হাতকড়া, পায়ে শিকল বেঁধে রাখা হয় অনেকের। গত ৬ মার্চ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৪৫ অবৈধ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠায় মার্কিন প্রশাসন।
বিবিসি বাংলার বিশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত ২ আগস্ট ৩৯ বাংলাদেশি, ৮ জুন ৪২ জনকে, ৬ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৪ জন অবৈধ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়। এছাড়া, সর্বশেষ গত ৫ সেপ্টেম্বর হাতকড়া ও শিকল বেঁধে ৩০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়।
মার্কিন আইন অনুযায়ী বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবস্থানকারী অভিবাসীদের আদালতের রায় বা প্রশাসনিক আদেশে দেশে ফেরত পাঠানো যায়। আশ্রয়ের আবেদন ব্যর্থ হলে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ (আইসিই) তাদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করে। সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রক্রিয়া দ্রুততর করার কারণে চার্টার্ড ও সামরিক ফ্লাইটের ব্যবহার বেড়েছে।
ফেরত আসা এক বাংলাদেশির বর্ণনা দিয়ে বিবিসি বাংলা লিখেছে, “পুরা পেটে শিকল আছিলো, হাতে হাতকড়া ছিল, তারপর দোনো পায়ে কড়া লাগানো ছিল" এভাবেই ৬০ ঘণ্টার বিমানযাত্রায় অপরাধীর মতো আটকে রাখার কথা জানান যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনপ্রত্যাশী রুবেল (ছদ্মনাম)। উন্নত জীবনের আশায় গত বছরের অক্টোবরে ট্যুরিস্ট ভিসায় পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। মাত্র আটদিন পরেই তাকে আটক করা হয়, নেওয়া হয় ডিটেনশন সেন্টারে। দেশে ফেরত পাঠানোর আগে প্রায় ১০ মাস সেখানে রাখা হয় ২৯ বছর বয়সী রুবেলকে। কিন্তু ডিটেনশন সেন্টারে দেওয়া হতো না পর্যাপ্ত খাবার।
অবৈধ অভিবাসনের অভিযোগে সবশেষ সামরিক বিমানে চাপিয়ে অন্য অনেকের সাথে দেশে ফেরত পাঠানো হয় তাকে। সাথে ছিল অন্য দেশের কয়েকজন নাগরিকও। তাদের সবাইকে শিকল বেঁধে, হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। এমনকি আড়াই দিনের সেই জার্নিতে কেবল চিজ দেওয়া চারটি পাউরুটি, আর আধা লিটারেরও অর্ধেক পানি দেওয়া হয়েছিল বলে জানান রুবেল। “পানির জন্য ধরেন গলা শুকায়ে গেছে। আমরা এতো পানি চাইছি, আমাদেরকে ওনারা পানিই দেয় না। কিন্তু ওনারা ঠিকই একটার পর একটা বোতল খুইলা পানি খাইতাছে, এই খাবার খাইতাছে, ওই খাবার খাইতাছে, কিন্তু আমাদের কোনো গুরুত্বই নাই”, বলেন দেশে ফেরত পাঠানো এই অভিবাসনপ্রত্যাশী।
পেটে শিকল বেঁধে রাখার কারণে সেই পানিটাও মুখে তুলে খেতে কষ্ট হয়েছে বলে জানান রুবেল। বলেন, শৌচাগারে নেওয়ার সময়ও পুরোপুরি খুলে দেওয়া হয়নি হাতকড়া। ভেতরে ঢুকলে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন কোনো অফিসার। “আমরা যে চেয়ারে বসছি, সেখান থেকে হিলতে পারি না। হিললে ওনারা আইসা যাইতা ধইরা বসায় দেয়”, অভিযোগ করেন তিনি।
মীর্জা ইকবাল

মন্তব্য করুন: