সিলেটে কর্মসংস্থানের ৯২ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক

দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সিলেটে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান অনেক বেশি—এ হার ৯২ শতাংশেরও বেশি। অর্থনৈতিকভাবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করছে, কারণ এটি দেখায় সিলেটের স্থানীয় অর্থনীতি এখনো মূলত রেমিট্যান্সনির্ভর, উৎপাদন বা শিল্পনির্ভর নয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, জাতীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানের ৮৪ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে, আর সিলেট বিভাগে এ হার দাঁড়িয়েছে ৯২ দশমিক ২৫ শতাংশে। বিভাগের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ। ময়মনসিংহে অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের হার ৮৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮৪ দশমিক ৬১ শতাংশ, খুলনায় ৮৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৮১ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং বরিশালে সবচেয়ে কম ৮১ দশমিক ১ শতাংশ।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সিলেট দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রেমিট্যান্সনির্ভর অঞ্চল। এখানকার বিপুলসংখ্যক মানুষ যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত। ফলে প্রবাসী আয় স্থানীয় অর্থনীতিতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখলেও, নতুন শিল্প বা ফরমাল চাকরির বাজার তৈরি হচ্ছে না। রেমিট্যান্সের টাকা জমি কেনাবেচা, নির্মাণকাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিলাসী ব্যয়ে ব্যবহৃত হলেও উৎপাদনমুখী খাতে বিনিয়োগ তুলনামূলক কম।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, সিলেটে বিপুলসংখ্যক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, দোকানি, নির্মাণশ্রমিক, রাইডার ও ট্রাভেল এজেন্সি কর্মী রয়েছেন। তারা অধিকাংশই নিজের উদ্যোগে বা পরিবারভিত্তিকভাবে কাজ করেন। ফলে আয় থাকলেও কর্মসংস্থান কাঠামো ফরমাল নয়।
বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ছয় কোটি ৯১ লাখ কর্মরত জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানে নিয়োজিত পাঁচ কোটি ৮০ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। এদের মধ্যে ৩৬ দশমিক ৪৪ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছর, ৫৯ দশমিক ২৯ শতাংশের বয়স ৩০ থেকে ৬৪ বছর এবং মাত্র ৪ দশমিক ২৮ শতাংশের বয়স ৬৫ বা তদূর্ধ্ব।
জাতীয়ভাবে নারী শ্রমিকদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের হার ৯৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং পুরুষদের মধ্যে ৭৮ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। শহরাঞ্চলে অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা এক কোটি ৩২ লাখ ২০ হাজার (৭৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ) এবং গ্রামাঞ্চলে চার কোটি ৪৮ লাখ ২০ হাজার (৮৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ)।
অন্যদিকে আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের হার জাতীয় পর্যায়ে মাত্র ১৬ শতাংশ—যেখানে নারী ৪ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ এবং পুরুষ ২১ দশমিক ৯২ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদদের মতে, উৎপাদনমুখী বিনিয়োগ, নতুন শিল্প স্থাপন ও কর্মসংস্থানের বহুমুখীকরণ ছাড়া সিলেটসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ফরমাল চাকরির সুযোগ বাড়ানো সম্ভব নয়।
এ রহমান

মন্তব্য করুন: