নবীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীতে শ্রমিকের মৃত্যু নিয়ে রহস্য

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদীতে গোলাম রাব্বি (২৮) নামে এক বালুশ্রমিকের মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য ও রহস্যের ঘনঘটা তৈরি হয়েছে। গত রোববার (১২ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের কুমারকাদা এলাকায় বালু তোলার কাজে নিয়োজিত অবস্থায় তিনি নদীতে তলিয়ে যান। সোমবার সকালে ডুবুরি দল নদীর তলদেশ থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বালু তোলার কাজে ব্যবহৃত একটি বড় নৌকার নিচের অংশে ফাটল ধরা পড়লে সেটি মেরামতের জন্য পানিতে নামেন গোলাম রাব্বি। কিছু সময়ের মধ্যেই তিনি স্রোতের তোড়ে তলিয়ে যান। খবর পেয়ে হবিগঞ্জ সদর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে যায়। রাতে উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হলেও সোমবার সকাল ৯টার দিকে অভিযান চালিয়ে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ফায়ার সার্ভিস সদস্য মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘রাতে উদ্ধার অভিযান ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। সকালে নতুন করে অভিযান শুরু করে আমরা নদীর তলদেশ থেকে নিখোঁজ শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করি।’
পুলিশ জানায়, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তবে এই মৃত্যু ঘিরে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। নিহতের ভাই ও নবীগঞ্জ থানা পুলিশ দাবি করেছেন, রাব্বি কাজ শেষে গোসল করতে পানিতে নেমে ডুবে মারা যান। কিন্তু তাঁর দুই সহকর্মীর বক্তব্য একেবারেই ভিন্ন।
সহকর্মী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রাব্বি মাছ ধরতে পানিতে নামে, ডুব দেয়ার পর আর উঠে আসে না।’ অপর এক সহকর্মী জানান, ‘নৌকার ফুটো বন্ধ করতে ডুব দিয়েছিল সে। পরে আর দেখা যায়নি।’
এই পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। অনেকে বলছেন, এটি হয়তো নিছক দুর্ঘটনা নয়—এর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে অজানা কোনো রহস্য।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ কামরুজ্জামান বলেন, ‘নিখোঁজ শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।’
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি। তাঁরা দ্রুত এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
কুশিয়ারার বুকজুড়ে এখন ভেসে বেড়াচ্ছে একটাই প্রশ্ন—গোলাম রাব্বির মৃত্যু কি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে অজানা কোনো রহস্য?
এ রহমান

মন্তব্য করুন: