দলে বলে ফের মাঠে জামান
Post Top Ad

দলে বলে ফের মাঠে জামান

প্রথম সিলেট প্রতিবেদন

১১/১০/২০২৫ ১০:১৪:২৯

প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না: ফাইজ তাইয়েব আহমেদ

দলে বলে অবশেষে মাঠে ফিরলেন জামান। যুক্তরাজ্যে ব্যক্তিগত সফর শেষে সম্প্রতি সিলেট আসেন তিনি। নেতার ফিরে আসায় বল পায় কর্মীরা। লড়তে চায় দলের জন্য। নেতার দৃষ্টি ফেরাতে চায় দলের প্রতি। আশায় বুক বাঁধে নিবিড় আশ্রয়ের। মামলা-হামলা আর বঞ্চনায় দীর্ঘদিন অবহেলিত দলের দুর্দিনের কর্মীরা হঠাৎ করেই যেন ফের জ্বলে উঠলো আগের মতোই। যেমনটি লড়েছিল চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে। লড়াই এর মূল ছিল জামান ‘বড়াই’। ফলে ফের উজ্জীবিত হাজার হাজার নেতাকর্মী। যাদের তাড়নায় মূলত যুক্তরাজ্য ছেড়ে সিলেটের মাঠিতে আবারও প্রত্যাবর্তন। ।


ন’য়ের দশকে সিলেটের ছাত্র রাজনীতিতে একটি নামই তখন অপ্রতিদ্বন্দ্বি। তিনি শামসুজ্জামান জামান। এই নামে শরীরে সৃষ্টি হতো ভূ-কম্পন। উতাল-পাতাল ঢেউ বয়ে যেত সর্বত্র। দলীয় পরীক্ষায় বারবারই প্রথম গ্রেড পাওয়ায় মিছিল,মিটিং, সংগ্রাম,দুর্যোগ আর দলীয় সঙ্কটে তিনি ছিলেন ‘সবেধন নিলমনি’। রাজনীতি বিষয়ে পড়াশোনার আগ্রহ  ছাত্রজীবন থেকেই। ফলে বইপোকা মানুষটি দেশিয় রাজনীতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কেও ধারণা রাখেন অনেকের কল্পনাতীত। দেশি-বিদেশী জার্নালে নিত্য রাজনৈতিক খবর সংগ্রহ ও পাঠ করা এখনও দৈনন্দিন রুটিন। রাজনীতির পাঠ তাঁর নিজের রাজনীতিকে করেছে আরো ঋদ্ধ ও কর্তব্যনিষ্ট। কিন্তু সেই কর্তব্যের ডাক কখনো থেমে যায়। থামিয়ে দেওয়া হয়। তখনই রাজনীতির প্রতি সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড ক্ষোভ, অভিমান। ক্রিয়াহীন মানুষের মান-অভিমান কিংবা রাগ-অনুরাগ থাকে না। থাকার কথাও নয়। কিন্তু পথচলা পথিককে থামি্য়ে দিলে যাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়। জামানকেও থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। থামানোর যাত্রা শুরু হয় সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠন দিয়ে। যার হাত ধরে সিলেটে শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে পরিচিত পাওয়া স্বেচ্ছাসেবক দল, সেই কমিটি থেকেই অদৃশ্য ইঙ্গিতে বাদ দেওয়া হওয়া হয় তাঁর অনুসারীদের। তিনি বিষয়টি কেন্দ্রকে জানান। কিন্তু লাভ হয় নি। অবশেষে কেন্দ্র ঘোষিত কমিটি দিয়েই কার্যক্রম চলে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের। বুকে পাথর চেপে সেই কষ্ট সংবরণ করলেও দলীয় নেতাকর্মীদের হামলা-মামলা এবং আওয়ামী দু:শাসনের বিরুদ্ধে তৎকালীন স্বেচ্ছাসেবক দলের দায়সারা ভূমিকা তাকে ভাবিয়ে তোলে। বুকে জ্বলতে থাকে তুষের আগুন। অগত্যা ২০২১ সালের ১৮ আগষ্ট তিনি মীরাবাজারস্থ নিজ অফিসে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দল থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি এও বলেন, ‘দল থেকে বিদায় নিয়েছি- এর মানে এই নয়,যে আমি অন্য কোনো দলে যোগদান করবো। তবে দলীয় পরিচয় বিহীন দলের আদর্শ ধারণ করেই হবে আমার আগামীর পথ চলা’। যে জামানকে থামানো যায় নি, যে জামান কখনো থেমে থাকে না, সেই জামান উঠে দাঁড়াবেই। সেই থেকে তিনি সৃষ্টি করেন অরাজনৈতিক একটি প্লাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্মে স্থান পায় জামানের সৃষ্টি জাতীয়তাবাদী হাজার হাজার ত্যাগী নেতাকর্মী। সংগঠনের নাম হয় ‘সলিসিডার মুভমেন্ট’। সংগঠনের ছাত্র, যুব ও অভিভাবক শাখা গঠন করে নিয়মিত চলে রাজনৈতিক প্রশিক্ষন, পাঠচর্চা ও বইপড়াসহ সামাজিক নানা কার্যক্রম। স্থানীয় নানা সমস্যাসহ সরকারের গণবিরোধী বিভিন্ন সিদ্বান্তের প্রতিবাদে সেই শক্তি সিলেটের রাজপথে নিজেদের অবস্তান জানান দিয়েছে বারবার। এই শক্তি নিয়েই গেল বছরের জুলাই মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের রাষ্ট্রিয় বাহিনীসহ ‘লীগ’ বাহিনীর মোকাবেলা করেন তিনি। উত্থাল সময়ে রক্তে রঞ্জিত হয়েও স্বৈরাচার পতন পর্যন্ত মাঠেই ছিলেন। আঘাতের ক্ষতচিহ্ন এখনও শরীর বয়ে বেড়াচ্ছেন। তারপর তিনি ব্যক্তিগত সফরে পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। 


দুই ডজনেরও বেশি রাজনৈতিক মামলা কাঁধে নিয়ে সেদিনও মাঠে ছিলেন তিনি। সারাদেশ ব্যাপী শেখ হাসিনার সরকার যখন নির্বিচারে ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালিয়েছিল, সেই আন্দোলনের ঢেউ সিলেটেও তখন তুঙ্গে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ এক হয়ে যখন সিলেটের রাজপথ দখলে নিয়েছিল, সেদিন তার বাহিনী একাই প্রতিরোধ গড়েছিল সরকার বাহিনীর বিরুদ্ধে। জামান নামের আগে পিছে কেবল সংগ্রাম। ব্যক্তি ও রাজনৈতিক জীবনে তিনি প্রচণ্ড জেদী। এই স্বভাব তাঁর রাজনৈতিক উত্থানে কখনো কাল হয়েছে আবার কখনো পৌছে দিয়েছে কাঙ্খিত লক্ষ্যে। আবার দলীয় ভাবে অনেকেই এই উত্থানকে মেনে নিতে পারেনি। চেষ্টা চালানো হয়েছে দমিয়ে রাখার। তবুও দমানো যায় নি। তিনি দমে যাওয়ার পাত্র নয়। বরং আরও দ্বিগুন উৎসাহে এক এক করে সৃষ্টি করেছেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। তাঁর হাত ধরেই ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলে সৃষ্টি হয়েছে অগনিত নেতার। যাদের উপর ভর করেই সিলেটে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে আজ সিলেটের জাতীয়তাবাদী রাজনীতি। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জননেতা এম ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর সিলেটে জামানের হাত ধরেই প্রথম গড়ে উঠে ‘ এম ইলিয়াস আলী মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ’। 


সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে পারিবারিক সফর শেষে দেশে ফেরেন সিলেটে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির মাঠ কাঁপানো এই নেতা। ১০ অক্টোবর তিনি দরগায়ে হযরত শাহজালাল (র.) এর দরগাহ মসজিদে নিজের নেতাকর্মীদের নিয়ে পবিত্র জুম্মা’র নামাজ আদায় শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে কথা বলেন। সে সময় তিনি সিলেট-৪ আসন থেকে জাতীয়তাবাদী দলের মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এর আগে ২০১৮ সালেও তিনি এই আসনে নির্বাচনের জন্য দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে দলের সিনিয়র নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিম মনোনয়ন চাইলে দলীয় নির্দেশে তিনি প্রার্থীতা থেকে বিরত থাকেন। তবে সেই নির্বাচনে দিলদার হোসেন সেলিমের হয়ে দলের পক্ষে মাঠে সরব ছিলেন তিনি। 


এদিকে জামানের ফিরে আসা এবং সিলেট-৪ আসনে প্রার্থীতা ঘোষণায় দলের মধ্যে এক জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে  প্রাণচাঞ্চল্য আরও বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন অনেকেই। অনেক নেতা মনে করছেন, জামানকে দলে ফেরানো কিংবা মনোনয়ন নিশ্চিত করা হলে, সবকটি আসনে জাতীয়তাবাদী শক্তির পূনর্জাগরণ গঠবে। তাঁরা মনে করেন, জামান কেবল সিলেটেই নয়, সারা বিভাগে একটি ব্র্যান্ড। একটি যাদুমন্ত্র। এই মন্ত্র একবার উচ্চারণ করলে অদৃশ্য শক্তি হাওয়া হয় বাতাসের আগে। 


এ বিষয়ে জানতে চাইলে, শামসুজ্জামান জামান বলেন, যেহেতু এখন পর্যন্ত দলের কাউকে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হয় নি, সে হিসেবে আমি অবশ্যই দলের কাছে মনোনয়ন চাইবো। দল আমাকে যোগ্য মনে করলে অবশ্যই মহান রবের উপর ভরসা করে জনগণকে সাথে নিয়ে বিজয় সুনিশ্চিত করবো। তিনি বলেন, পূর্বাঞ্চলের এই সমৃদ্ধ জনপদটি খুবই অবহেলিত। শুধুমাত্র যোগ্য নেতৃর্ত্বের অভাবে এই এলাকায় মানুষ বারবার আশাহত হয়। উন্নয়ন বঞ্চিত সিলেট-৪ আসনকে সমৃদ্ধ করতে হলে দক্ষ এবং যোগ্য লোককে মনোনয়ন প্রদান এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। তিনি জনদাবির বিষয়টি আমলে নেওয়ার জন্য দলীয় হাই কমান্ডের প্রতি বিনম্র অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, দেশনায়ক তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা এই দেশের মানুষের মুক্তির সনদ। ৩১ দফার আওয়াজ যারাই বুঝতে সক্ষম হবেন, তাদের জন্যই আগামীর বাংলাদেশ হবে বাসযোগ্য।


মীর্জা ইকবাল

মন্তব্য করুন:

Post Bottom Ad
Sidebar Top Ad
Sidebar Botttom Ad