বদলীর চেষ্টায় মরিয়া ওসমানী হাসপাতালের বিতর্কিত অরবিন্দু
Post Top Ad

ঢাকা-সিলেটে বাসাসহ রয়েছে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

বদলীর চেষ্টায় মরিয়া ওসমানী হাসপাতালের বিতর্কিত অরবিন্দু

তাহির আহমদ

০৭/১০/২০২৫ ২০:৩৩:৪১

প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না: ফাইজ তাইয়েব আহমেদ

সৌভাগ্যবান এক অরবিন্দু দাস। চাকুরীর ১৫ বছরের মধ্যেই সিলেট ও ঢাকায় করেছেন নিজের বাড়ি। সিলেট নগরে রয়েছে নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। একজন সিনিয়র স্টাফ নার্সের পদে থেকে এতোসব অর্জন অরবিন্দু দাসের। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেশ দাপট ছিল এই নার্সের। স্টাফ নার্সের পদে থেকেও নিয়ন্ত্রণ করতেন স্টোর বিভাগ। অপকর্ম উদ্যোক্তাদের তিনি ছিলেন অন্যতম। ফলে যখন-তখন স্টোর রুম থেকে সরকারি ঔষধ পাচার হতো নিশ্চিদ্র ভাবে। সেই সময়ে ঔষধ পাচার চক্রের অন্যতম ছিলেন এই অরবিন্দু দাস। তখন থেকেই হাতে ধরা দিতে থাকে কাড়ি কাড়ি টাকা। এখন কোটি কোটি টাকা অরবিন্দু দাসের। তবে গেল বছরের ৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর শঙ্কায় আছেন তিনি। নিজের অপকর্ম ঢাকা দিতে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন অন্যত্র বদলির। সুযোগ বোঝে নিজের পরিবারকেও পাঠিয়ে দিয়েছেন রাজধানীতে। সেখানে থাকছেন স্ত্রী সন্তান। সন্তানরা লেখাপড়া করছেন ঢাকাতেই। অথচ নার্সের চাকুরী দিয়েই সন্তানদের লেখাপড়াসহ সবকিছু বহন করছেন একা মাত্র এক ব্যক্তি। বিষয়টি অবাক করার মতো হলেও অসম্ভবকে সম্ভব করাই অরবিন্দু দাসের কাজ। সেটি তিনি করেও চলছেন। কিন্তু এবার আর সিলেট থাকতে ইচ্ছুক নন তিনি। যতো দ্রুত সম্ভব চাকুরী বদলীর আবেদন করে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন এই সিনিয়র স্টাফ নার্স। হাসপাতালের অন্তত ৩ থেকে ৪ জন নার্স জানিয়েছেন, আরবিন্দু আগে নিজেই বদলী বাণিজ্য করতেন। বদলী বাণিজ্যের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে ভালো সখ্যতা রয়েছে অরবিন্দুর। ফলে বিগত দিনে বদলী বাণিজ্য থেকে তার ইনকাম ছিল বেশ উল্লেখযোগ্য। আবার হয়রানী মূলক বদলীও করিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে শেখ হাসিনার মেয়াদকালীন অরবিন্দু ছিলেন, ওসমানীর নার্সদের মধ্যে এক মূর্তিমান আতঙ্ক। 


বদলীর আবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী-অরবিন্দু দাস সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরীতে যোগদান করেন ২০১০ সালে ৭ অক্টোবর। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তিনি বদলীর আবেদন করেন গেল বছরের ২১ নভেম্বর। বদলীর কারণ হিসেবে অরবিন্দু উল্লেখ করেন, লেখাপড়ার কারণে নিজের সন্তানরা রাজধানীতে অবস্তান করছেন এবং নিজের স্ত্রীও রয়েছেন সন্তানদের সাথে। এ অবস্তায় সিলেট থেকে নিয়মিত ঢাকায় যাওয়া-আসা খুবই কষ্টকর বলে তিনি আবেদন পত্রে উল্লেখ করেন। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে মানসিক বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালনকারী অরবিন্দু দাস রাজধানীর জাতীয় মাসনিক স্বাস্থ্য ইন্সিটিটিউটে বদলী হতে চান বলে আবেদন পত্রে উল্লেখ করেন।


এদিকে অরবিন্দু দাসের বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে বের হয়ে আসে সিলেট শহরে তাঁর একাধিক প্রতিষ্ঠানের কথা। এর কোনটিতে তিনি একক আবার কোনটিতে তিনি পার্টনার হিসেবে রয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে সিলেটের মেন্দিবাগস্থ হোটেল গ্র্যান্ড সুরমার তিনি পরিচালক। জিন্দাবাজারে রয়েছে পার্টনারশিপ আরও একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের নাম দ্যা লাক্সারি রেস্টুরেন্ট। একটি রিসোর্ট রয়েছে অরবিন্দু দাসের। তাছাড়া নিজের জন্য কেনা বসতভিটাসহ আরও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে হাসপাতালের একটি সুত্র দাবি করেছে। ওই সুত্র অনুযায়ী অরবিন্দু দাস এখন নিজের অপকর্ম গা ঢাকা দিতেই বদলীর প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সহকর্মীদের বলেছেন, প্রয়োজনে ২০ লাখ টাকা খরচ করেও তিনি সিলেট থেকে বদলী হতে চান। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে নার্সিং মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর মহা পরিচালকের অফিসে কর্মরত একাধিক ব্যক্তির সাথে তিনি যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।


জিন্দাবাজারস্থ লাক্সারি রেস্টুরেন্টের পরিচালক (মার্কেটিং) শাহ ইসমাইলের সাথে কথা বলে অরবিন্দু দাসের রেস্টরেন্টের সাথে পার্টনারশিপের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে, তিনি খাবার শেষে কথা বলবেন বলে,সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। একই সাথে মেন্দিবাগস্থ হোটেল গ্র্যান্ড সুরমার পার্টনারশিপের বিষয়টিও রিসিপশন সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে।


অভিযুক্ত অরবিন্দু দাসের সাথে এ বিষয়ে বেশ কিছুদিন আগে কথা হলে তিনি, অভিযোগ স্বীকার না করে,অফিসে এসে কথা বলার অনুরোধ জানান। 


এদিকে অরবিন্দু দাসের বদলী বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ নার্স এসোসিয়েশন সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহমদ বলেন, বদলী যে কেউ চাইতে পারে। তাতে অসুবিধার কিছু দেখছি না। নার্সের বেতন দিয়ে ঢাকা এবং সিলেটে বাসাভাড়াসহ পরিবারের খরচ যোগানো কতোটুকু সম্ভব-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্যের বিষয়ে বলতে পারবো না। এটা নির্ভর করে তার ইনকাম সোর্সের উপর। তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে এই বেতন দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব ভালো নেই।  



এ রহমান

মন্তব্য করুন:

Post Bottom Ad
Sidebar Top Ad
Sidebar Botttom Ad