এসসিসিআই'র নির্বাচন : ২৬ পদের বিপরীতে প্রার্থী ৪৯ জন

সিলেটে ব্যবসায়ীদের সর্ববৃহত প্ল্যাটফর্ম দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন (২০২৫-২৭) অনুষ্ঠিত হবে ১ নভেম্বর। নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে নির্বাচনী তপশিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফশিল অনুযায়ী ইতেমধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহনেচ্ছুক প্রার্থীদের মনোনয়ন জমাদানের সময় সীমা শেষ হয়ে গেছে। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে ( ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) বিভিন্ন পদে মনোনয়ন পত্র জমা করেছেন ৪৯ জন প্রার্থী। প্রার্থীতা বিষয়ে আপত্তি, যাচাই-বাছাই ও শুনানী কার্যক্রম শেষে ২২ অক্টোবর তালিকা প্রকাশ হবে চূড়ান্ত মনোনীত বৈধ প্রার্থীদের।
সিলেট চেম্বারের চলতি নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা (হা্ল নাগাদ) ৩ হাজার ১ শত ৪০ জন। এবারই প্রথম পরিষদ বড় হয়ে ২৬ সদস্যের পরিচালনা পরিষদ গঠন করা হবে। আগে সরাসরি ভোটে সভাপতি, সহসভাপতি নির্বাচিত না হলেও এবারই প্রথমবারের মতো সবগুলো পদে সরাসরি ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সিলেট চেম্বারে ভোটারদের মধ্যে ক্যা্টাগরি রয়েছে ৪ টি। এই ৪ শ্রেণী থেকে অর্ডিনারি ২০৪৮ জন ভোটার থেকে ১২ জন নির্বাচিত হবেন। এসোসিয়েট শ্রেণী থেকে ১০৮০ জন ভোটার নির্বাচিত করবেন ৬ জন প্রতিনিধি। ট্রেপ গ্রুপে ভোটার রয়েছেন মাত্র ১০ জন। এখান থেকে নির্বাচিত হবেন ৩ জন প্রতিনিধি। আর টাউন এসোসিয়েশনে ভোটার মাত্র ২ জন। ফলে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় ২ জনের প্রার্থী বৈধ হলে তাদের ২ জনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. নুরের জামান চৌধুরী, সদস্য হিসেবে রয়েছেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার তানভীর হোসাইন সজীব এবং সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাহমুদ আশিক কবির।
এবারের নির্বাচনে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। যেহেতু প্রথমবারের মতো সভাপতি, সিনিয়র সহ সভাপতি ও সহ সভাপতি সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন, সেকারণে নির্বাচনে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে বেশ উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। চূড়ান্ত বৈধ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের আগেই অনেকেই শুরু করেছেন নির্বাচনী প্রচারণা। প্রচারণায় প্যানেল কেন্দ্রীক নির্বাচনের ঘোষণাও লক্ষ্য করা গেছে। সে হিসেবে এবারের নির্বাচন অনেকটা ঝাঁকজমক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে ভোটাররা মনে করছেন।
সিলেট চেম্বারের সচিব গোলাম আক্তার ফারুক বলেন, নির্বাচন সুষ্টুভাবে সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন কমিশন সকল প্রস্তুতি গ্রহণ সম্পন্ন করেছেন। চেম্বারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সকল প্রকার সহযোগীতা অব্যাহত রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচনের মাধ্যমে সিলেটে ব্যবসায়ীরা তাদের যোগ্য প্রতিনিধি মনোনীত করার মধ্য দিয়ে ব্যবসায়ী সমাজের কল্যাণ সুনিশ্চিত করবেন।
সিলেট চেম্বারের প্রশাসক ও সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্যাট সাঈদা পারভিন বলেন, আশা করছি দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশন যথাযথ সুষ্ট ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সিলেটের ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি নির্বাচনে সচেস্ট হবেন। ইতোমধ্যে তাদের সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়ে গেছে।
এর আগে গেল বছরের ১০ ডিসেম্বর সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও মহাপরিচালক, বাণিজ্য সংগঠন মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়, বাণিজ্য সংগঠন আইন ২০২২-এর ১৭ ধারা অনুযায়ী, প্রশাসক ১২০ দিনের মধ্য সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবেন। একই স্বারকে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা অক্তার মিতাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
আদেশে আরও উল্লেখ করা হয়, সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ২০২২-২৩ মেয়াদি পরিচালনা পরিষদের সভাপতিসহ পাঁচ সদস্য পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হলেও পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ গঠন প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ বিধায় প্রাক্তন দুজন সহসভাপতিসহ আরও ছয় সদস্যের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সভাপতি বরাবর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। চেম্বারের পুনর্গঠিত পর্ষদ কারণ দর্শানোর সন্তোষজনক জবাব উপস্থাপন করতে পারেনি। ফলে চেম্বারের চলমান অস্থিরতা ও অসন্তোষের কারণে দেশের অর্থনীতি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং এ পরিস্থিতিতে পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ ভূমিকা রাখতে পারছে না বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়।
পরিচালনা পর্ষদের সমন্বয়হীনতার কারণে বাণিজ্য সংগঠন ২০২২ এর ১৭ (১) অনুযায়ী ব্যবসা, শিল্প, বাণিজ্য ও সেবাখাতের স্বার্থে সংগঠনটির সার্বিক কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা হচ্ছে না মর্মে প্রতীয়মান হয়। তাই সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সকল কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং ব্যবসা বাণিজ্যে ও চলমান অস্থিরতা দূরীকরণের লক্ষ্যে বাণিজ্য সংগঠন আইন -২০২২, বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা -১৯৯৪, কোম্পানি আইন-১৯৯৪ ও সংগঠনের স্মারক, সংঘবিধি অনুযায়ী পরিচালিত হওয়া আবশ্যক।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সিলেট চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট আত্মগোপনে চলে যান। এরপর ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলে ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি। পরে চেম্বারের সদস্যদের দাবির মুখে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্টসহ পাঁচ সদস্য পদত্যাগ করলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এই বাস্তবতায় চেম্বারের কার্যক্রম সচল রাখতে প্রশাসক নিয়োগ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
তাহির আহমদ

মন্তব্য করুন: