ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ, উদ্দীপনা
সিলেট উইমেন চেম্বার্সের প্রথম নির্বাচন,শেষ সময়ে গ্রুপিংয়ের পদধ্বণি

সিলেটে নারী উদ্যোক্তাদের সর্ববৃহৎ একটি প্লাটফর্মের নাম সিলেট উইমেন চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। প্রতিষ্ঠার ১০ বছরে অতিক্রম করা এই প্রতিষ্ঠানে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন। এর আগে সিলেকশনের মাধ্যমে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হলেও এবারই প্রথম সরাসরি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফলে নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। প্রার্থীরাও দিন রাত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে কড়া নাড়ছেন ভোটের আশায়। মোট ২৭৪ জন ভোটার সরাসরি নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে ১১ সদস্যের পরিচালনা পরিষদ নির্বাচন করবে। পরিচালনা পরিষদে একজন সভাপতি, একজন সহ সভাপতি ও ৯ জন পরিচালক থাকবেন। নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড নির্বাচনকে সামনে রেখে একাধিকবার ভোটার ও প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক সম্পন্ন করেছেন্। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত সিলেট সুবিদ বাজারস্থ পিটিআই স্কুলে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে সহ-সভাপতি পদে একক প্রার্থী থাকায় নীতিমালা অনুযায়ী ওই পদের প্রার্থী আলেয়া ফেরদৌসি তুলিকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড।
প্রথমবারের মতো এই নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন দুইজন। তবে দুই প্রার্থীই ভোটারদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় ও পছন্দের। দু’জনের আলাদা পরিচিতিও রয়েছে নগর জুড়ে। এর মধ্যে লুবানা ইয়াছমিন শম্পা গেল বছরের ৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সে সুবাধে অধিকাংশ ভোটারের কাছে তিনি খুবই পরিচিত মুখ। একই সাথে একজন উদ্যোক্তা এবং সফল ব্যবসায়ী হিসেবেও তিনি সকলের কাছে পরিচিত। অপর সভাপতি পদপ্রার্থী সামিয়া বেগম চৌধুরী উদ্যোক্তার পাশাপাশি, শিক্ষা,সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অঙ্গণের ব্যাপক পরিচিত জন। ফলে একটি সুবিধাজনক অবস্থান রয়েছে এই প্রার্থীর। ভোটাররা বলছেন, সভাপতি পদে দুইজন প্রার্থীই যোগ্য। তবে নিয়ম অনুযায়ী যেহেতু একজনকেই নির্বাচিত করতে হবে, সেক্ষেত্রে ভোটাররা উদ্যোক্তাবান্ধব হিসেবে অধিকতর যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিবেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে পরিচালক পদে ৯ জনের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ১৫ জন প্রার্থী। তারা হলেন, মিসেস সামা হক চৌধুরী, সাইমা সুলতানা চৌধুরী নীলু,আসমা উল হাসনা খান, শাহানা আক্তার,গাজী জিনাত আফজা,রোজী বেগম, জাকিরা ফাতেমা লিমি চৌধুরী, আমাতা মাসুমা, রেহানা আফরোজ খান,তাহমিনা হাসান চৌধুরী, সৈয়দা শারমিন ফাতেমা, সৈয়দা নাইমা খানম, রেহানা ফারুক শিরিন, ইফফাত আরা খান ও তাহিয়া সিদ্দিকা। ভোটাররা জানিয়েছেন, পরিচালক পদে বিজয়ীদের ভোট সংখ্যায় খুব বেশি পার্থক্য হবে না। তবে এর মধ্যে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যাপক পরিচিত প্রার্থীদের জয়ী হবার সম্ভাবনা বেশি বলে ভোটাররা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট উইমেন চেম্বারের একাধিক ভোটার জানান, ‘ উইমেন চেম্বারে সদস্য সংখ্যা কম থাকায় স্বাভাবিক ভাবে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে একটি সুহৃদ সম্পর্ক রয়েছে। সেক্ষেত্রে কোন প্রার্থীকে ভোট দেওয়া হবে, এমনটি বলা এখনই ঠিক হবে না। তবে প্রথমবারের মতো একটি উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করায়, সত্যিই বিষয়টি আমাদের পুলকিত করছে।’ তবে আমরা চাই সভাপতি পদে যিনি আসীন হবেন-তিনি উদ্যোক্তা বান্ধব হবেন। বিশেষ করে নিজের কোন মতাদর্শ বাহিরে রেখে প্রতিষ্ঠানটির অগ্রযাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ করবেন।’
এদিকে সভাপতি পদে প্রার্থী সামিয়া বেগম চৌধুরী নিজের ফেসবুক পোস্টে একটি নির্বাচনী ইশতেহার পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি শুরুতেই উল্লেখ করেন, আমি সামিয়া চৌধুরী ও আমার পরিচালকবৃন্দের নির্বাচনী ইশতেহার। এর মধ্য দিয়ে সামিয়া চৌধুরী নিজের একটি প্যানেল রয়েছে, এমন বিষয়টি স্পষ্ট করে তোলেন। ইশতেহারে তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের ভিশন: "ডিজিটাল নারী উদ্যোক্তা শক্তিশালী অর্থনীতি" নারীদের ব্যবসা হবে প্রযুক্তি-নির্ভর, বৈশ্বিক মানসম্পন্ন ও প্রতিযোগিতামূলক। আমাদের অঙ্গীকারসমূহ: ১। ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন (Digital Chamber): ক) চেম্বারের সব সেবা অনলাইনে সদস্যপদ, সনদপত্র, লেনদেন। খ) উদ্যোক্তাদের জন্য ২৪/৭ ডিজিটাল হেল্প ডেস্ক। গ) একটি উইমেন বিজনেস অ্যাপ চালু, যেখানে থাকবে প্রোডাক্ট শোকেস, নেটওয়ার্কিং ও বাজার সংযোগ। ২। স্মার্ট অর্থায়ন ও ভেঞ্চার ক্যাপিটাল: ক) নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ভেঞ্চার ফান্ড। খ) ব্যাংক ছাড়াও স্টার্টআপ ইনভেস্টর ও ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম সংযুক্তি। গ) দ্রুত ঋণ অনুমোদনের জন্য "ফাস্ট-ট্র্যাক লোন সাপোর্ট সেল"। এছাড়া আরও বেশ কিছু কর্মসূচীর উল্লেখ রয়েছে ইশতেহারে।
এ বিষয়ে সভাপতি পদপ্রার্থী সামিয়া চৌধুরী জানান, ২০০৭ সাল থেকে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ফলে নির্ধারিত একটি কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। ভোটাররা সেই সুযোগ দিলে, নিজেকে উদ্যোক্তাদের কল্যানে নিয়োজিত রাখতে চাই। তিনি বলেন, এর বাহিরেও ১৯৯৪-২০০৬ পর্যন্ত দি সিলেট খাজাঞ্চিবাড়ি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষকতা করি। এরপর কিছুদিন মদনমোহন কলেজের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে ছিলাম। ইডেন গার্ডেন স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও ভাইস চেয়ারম্যান ছিলাম। সবকিছু মিলিয়ে আমার সকল অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে একটি সুন্দর পরিবেশের মধ্য দিয়ে উইমেন চেম্বার পরিচালনা করতে চাই। সদস্যরা আমাকে সেই সুযোগ দিলে, আমি আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষার চেষ্টা করবো।
নিজের কোন ইশতেহার কিংবা প্যানেল আছে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে অপর সভাপতি পদপ্রার্থী লুবানা ইয়াছমীন শম্পা বলেন, ‘চেম্বার আমার ব্যক্তিগত নয়, একটি প্রতিষ্ঠান। সুতরাং প্যানেল নিয়ে স্বৈরতান্ত্রিক হতে চাই না। বরং ভিন্ন মতের সকলের সমান সুযোগ থাকতে হবে। যে কারণে একক কোন প্যানেল ঘোষণার পক্ষে আমি নই। কারণ, যারা পরিচালক পদে প্রার্থী হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক। আমি শুধু নির্বাচনগত কারণে সেই সম্পর্কের ফাটল ধরাতে চাই না।’ লুবানা ইয়াছমিন বলেন, ভোটাররা নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। সেক্ষেত্রে সভাপতি পদে যিনি বিজয়ী হবেন, তিনি সকল পরিচালকের মতামতকে প্রাধান্য দিয়েই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করবেন। এখানে স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের কোন সুযোগ রাখা ঠিক নয়। ইশতেহার বিষয়ে তিনি বলেন, যিনি কাজ জানেন-তিনি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে পারেন। পরিকল্পনার বসবাস বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। আর কাজ যিনি করেন, তিনি কোন রাখ-ঢাক না করেই অনায়াসে তা করতে পারেন। আমি ভোটারদের কাছে কেবল তাদের সুচিন্তিত রায় ও দুআ প্রত্যাশা করি।
নির্বাচনে পরিচালক পদপ্রার্থী আসমা উল হাসনা খান বলেন, আমার উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প সহজ ছিল না। সংগ্রাম, সংঘাত, প্রাপ্তি,অপ্রাপ্তি এবং বেদনার এক বিরাট ইতিহাস রয়েছে। ফলে একজন নারীর উদ্যোক্তা হওয়ার সমস্যা এবং সম্ভাবনার বিষয়টি আমার ভালো করেই জানা আছে। তিনি বলেন, পরিচালক পদে ভোটারদের সুচিন্তিত রায় পেলে সকল ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করে সিলেট উইমেন চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিকে উদ্যোক্তা বান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
এদিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সহ-সভাপতি আলেয়া ফেরদৌসি তুলি বলেন, ভোটারদের অংশগ্রহণের প্রথমবারের মতো একটি নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি রয়েছে। এখানে প্রার্থী হিসেবে যারা অংশ গ্রহণ করেছেন, সকলেই জনপ্রিয়। তিনি বলেন, ৭ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে ভোটাররা দল মত নির্বিশেষ স্বাধীনভাবে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নির্বাচন করার একটি সুযোগ পাচ্ছে। প্রত্যেক ভোটার সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেদের পছন্দের এবং যোগ্য প্রার্থীকেই নির্বাচিত করবেন বলে প্রত্যাশা থাকলো।
তাহির আহমদ

মন্তব্য করুন: