মৌলভীবাজারের চাঁদনীঘাটের পাকা করা রাস্তার বেহাল দশা
Post Top Ad

মৌলভীবাজারের চাঁদনীঘাটের পাকা করা রাস্তার বেহাল দশা

নিজস্ব প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার

১৪/১০/২০২৫ ১৯:০০:২১

প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না: ফাইজ তাইয়েব আহমেদ

একসময় ছিল পাকা, ব্যস্ততম এক সড়ক। প্রতিদিন শত শত ছোট-বড় যানবাহন আর হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকত পথটি। এখন সে দৃশ্য শুধুই স্মৃতি। চলাচলের পথ নয়, যেন দুর্ভোগের এক নির্মম অধ্যায়। নামে সড়ক হলেও, বাস্তবে রয়েছে কর্দমাক্ত কষ্টের গল্প।


বলছি, মৌলভীবাজার সদরের চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ বাইপাস সড়কটির কথা। এই সড়কটি মনু নদের উত্তরপার থেকে মৌলভীবাজার টু কুলাউড়া মুল সড়কের সংযোগস্থল। যার দৈর্ঘ্য প্রায় দুইশত মিটার (প্রায় ছয়শত ফুট)। গত বিশ বছরেও মেরামতের মুখ দেখেনি। এই দীর্ঘ অবহেলার কারণে সড়কটি ক্রমাগত ভেঙে গিয়ে এখন পুরোপুরি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।


এই সড়ক দিয়েই স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ ও নানাধরনের যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু এখন তারা চলেন আতঙ্কিত হয়ে। পিচ আর খোয়ার বদলে হেঁটে যেতে হয় কর্দমাক্ত, খানাখন্দে ভরা পথ পেরিয়ে। পাশাপাশি এখানে রয়েছে একটি কেজি স্কুল, যার শিক্ষার্থী দুই শতাধিক। এছাড়াও চাঁদনীঘাট ও একাটুনা এই দুই ইউনিয়নের হাজারো মানুষজন স্বল্প সময় শহরে বা শহর থেকে নিজ নিজ এলাকায় যাতায়াতে এই সড়ক ব্যবহার করেন বলে জানা গেছে।


স্থানীয়দের অভিযোগ, একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও সাড়া মেলেনি। সড়ক সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ কারণে দিনে দিনে সড়ক আরও খারাপ হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। ছোট একটি সড়ক সংস্কারে দীর্ঘ সময় লাগায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।


তাদের দাবি, দ্রুত সড়কটি সংস্কার করে মানুষকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হোক।


স্থানীয়রা জানান, ২০০৪ সালে এই সড়কটি পাকা করার পর আর কাজ বা সংস্কার হয়নি। সেই সময় ক্ষমতায় ছিল চার দলীয় জোট সরকার। পরবর্তী ২০ বছরে ক্রমান্বয়ে ভাঙতে ভাঙতে এখন কর্দমাক্ত, খানাখন্দে ভরা পথে রুপান্তর হয়েছে সড়কটি। বিগত সরকারের সময় স্থানীয় প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দের নানা মত ও নানা শর্তের বেড়াজালে এই সড়কটি মেরামত করা হয়নি। এরমধ্যে কেউ কেউ সড়কটি মেরামত করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও, আশ্বাসে সীমাবদ্ধ ছিল।


স্থানীয় বাসিন্দা ভ্যানচালক জসিম মিয়া বলেন, সড়কটা এখন আর রাস্তা না, খালি গর্ত আর পানি। ভ্যান চালাতে গেলে চাকা দেবে যায়। বাসা থেকে আসা যাওয়ার পথে দুইবার ভ্যানের চাকা পরিষ্কার করতে হয়। এমন সড়কে চলাচল খুব কষ্টকর।


শিক্ষার্থী রুবেল আহমদ বলেন, এই সড়কে একবার বাইসাইকেল নিয়ে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙেছিল। অথচ এই সড়কটি আমাদের চলাচলের মূল পথ। দ্রুত সড়কটি সংস্কার করা হোক।


চাঁদনীঘাট এলাকার গৃহিনী রুবিনা আক্তার বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য সাধারণ মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এই রাস্তায় চলাচল করে। অথচ এই রাস্তা পুরোপুরি ভাঙা। সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এত বেশি গর্ত আর ময়লা পানিতে ভরা থাকে যে হাঁটাও যায় না।


গত ৫ বৎসর ধরে অতিরিক্ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে জানিয়ে স্থানীয় শিক্ষার্থী রাফি আহমদ বলেন, আমিসহ এলাকার কয়েকজন নিজ উদ্দ্যোগে মাঝেমধ্যে খোয়া ও বালু দিয়ে হাঁটাচলার ব্যবস্থা করি। কিন্তু গাড়ি চলাচলে তা আবারও পূর্বের অবস্থায় চলে যায়।


স্থানীয় ব্যবসায়ী খোকন দে খুকু বলেন, কয়েকবছর ধরেই রাস্তাটি বর্ষায় কাদাপানিতে একাকার হয়ে থাকে। লাগাতার বৃষ্টি হলে দুর্ভোগের মাত্রা বেড়ে যায়। তখন যানবাহন দূরের কথা পায়ে হেঁটে যাওয়াটাই মুশকিল হয়ে যায়।


আরেক স্থানীয় বাসিন্দা সোহান আহমদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বছরের পর বছর ধরে সড়কটির এই বেহাল অবস্থা দেখে আসছি। অনেকবার বিভিন্নজনকে বলেছি, তারা আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখন মনে হচ্ছে, এই আশ্বাসেই যেন ধীরে ধীরে শেষ আশাটুকুও নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।


এবিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদনীঘাট ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আহমদ আলী বলেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। আমরা বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বর্তমানে এলজিইডির আইডিভুক্ত করা হয়েছে। আশা করি খুব শিগগিরই সড়কটি সংস্কারের কাজ শুরু হবে। 

তাহির আহমদ

মন্তব্য করুন:

Post Bottom Ad
Sidebar Top Ad
Sidebar Botttom Ad