এনসিপি-গণঅধিকার পরিষদ একীভূত হওয়ার গুঞ্জন!

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নানা সমীকরণে ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলো। জোট গঠন ও আসন সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে সুবিধা নেওয়ার প্রবণতা এবারও চোখে পড়ছে। এরই মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে, তরুণ নেতৃত্বাধীন দুই রাজনৈতিক দল, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও গণঅধিকার পরিষদ একীভূত হতে যাচ্ছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে চাউর হয়েছে, দুপক্ষই ঐক্যের পথে এগোনোর চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে- এটি কি সত্যিই একীভূত হওয়ার উদ্যোগ, নাকি শুধুই গুঞ্জন?
রাজনৈতিক মহলের ধারণা, যদি একীভূত হয়, তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিকল্প জোট হিসেবে এ উদ্যোগ বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে উভয় দলই সমঝোতার চেষ্টা করছে। যদিও মৌলিক কিছু বিষয়ে তাদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে।
এনসিপি-গণঅধিকার পরিষদের একীভূত হওয়ার বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। এনসিপি নেতারা বিষয়টিকে ‘আলোচনার পর্যায়ে’ বলে উল্লেখ করেছেন। গণঅধিকার পরিষদের একাধিক নেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন, রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় তারা নতুন সমীকরণে যেতে আগ্রহী।
জানা গেছে, আলোচনার সূত্রপাত ঘটে যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অ্যাকশনে আহত গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরকে হাসপাতালে দেখতে যান এনসিপির কয়েকজন শীর্ষ নেতা। সেখান থেকেই অনানুষ্ঠানিকভাবে একীভূত হওয়ার বিষয়ে আলাপ শুরু হয়। তবে দুই দলের বেশ কয়েকজন নেতা বিষয়টি নিয়ে সরাসরি অবস্থান জানাতে এখনই রাজি নন।
এ বিষয়ে জানতে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এখনো একীভূত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ নিয়ে কোনো আলোচনা বা প্রস্তাবও আসেনি। তবে যৌক্তিক দাবির ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার চিন্তা আছে।’
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানও একই সুরে বলেন, ‘রাজনীতিতে নানা আলোচনা সব সময় হয়। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তাদের অনেকে আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করেছে। তাই নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা আছে, কিভাবে একসঙ্গে কাজ করা যায়। তবে একীভূত হওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক হয়নি।’
দুটি দলের প্রেক্ষাপট প্রায় একই। ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গঠিত বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ২০২১ সালে গণঅধিকার পরিষদে রূপ নেয়। আর ২০২৪ সালের কোটা আন্দোলনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তদের হাত ধরেই গড়ে ওঠে এনসিপি। এনসিপির অনেক নেতার রাজনৈতিক হাতেখড়িও হয়েছিল নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে। সেই হিসেবে নুরকে তাদের ‘রাজনৈতিক গুরু’ বলেও অনেকে উল্লেখ করেন। বর্তমানে গণঅধিকার পরিষদ নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেলেও এনসিপি এখনো তা পায়নি।
গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান বলেন, ‘আলোচনা তো অনেক কিছুই হয়। এমন কিছু ঘটলে সবাই জানবেন। আমরা তারুণ্যের শক্তিগুলো এক করার চেষ্টা করছি। রাজনীতিতে অনেক কিছুই সম্ভব।’
এনসিপির কয়েকজন শীর্ষ নেতা স্বীকার করেছেন যে আলোচনা চলছে, তবে তারা প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চান না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, ‘গণঅধিকার পরিষদ এনসিপিতে যোগ দিতে চায়- এমন আলোচনা আছে। নিজেদের মধ্যে আলাপ চলছে, তাদের সঙ্গেও কথা হচ্ছে। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।’
এদিকে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা মধ্যপন্থি রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যারা এ ধারার রাজনীতির সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করে, তাদের এনসিপির সঙ্গে যুক্ত হওয়াকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখি।’
মীর্জা ইকবাল

মন্তব্য করুন: