বিলিন হচ্ছে বসতি
ভাটিতে ঢেউয়ের আঘাতে সর্বনাশ মানুষের

বর্ষাকালে সুনামগঞ্জের দুর্গম হাওরের উপজেলা মধ্যনগরের গ্রামগুলোতে বসবাসরত বিশাল জনগোষ্ঠী ঢেউয়ের কারণে ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করেন। প্রতিবছর স্বল্পমেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদী বন্যায় এসব গ্রামের বাসিন্দারা ঘরের ভেতরে পানি আর হাওরের উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে বাড়িঘর ভেঙে চরম দুর্ভোগ পোহান। গত কয়েক বছর ধরে পর পর বন্যা ও অতিবৃষ্টির সময় খুব নাজেহাল অবস্থায় ছিলেন তারা। চোখে না দেখলে বোঝার উপায় নেই হাওরের বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো অধিকাংশ গ্রামের বাসিন্দারা কতটা দুর্ভোগে আছেন।
সরজমিনে মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের ভূমিহীনদের গ্রাম আলমপুর নয়াপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, হাওরের উত্তাল ঢেউ থেকে বাঁচতে গ্রামের প্রতিটি বাড়ির সামনে বাঁশ, বন, কুচুরিপানা দিয়ে ঢেউ থেকে ঘরবাড়ি রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করলেও ঢেউয়ের থাবায় প্রতিটি বাড়ির সামনে-পেছনে গড়ে ১৫-২০ ফুট মাটি ভেঙে হাওরে বিলীন হয়ে গেছে। এতে ঝুঁকিতে পড়ছে ভূমিহীনদের জন্য সরকারি অর্থায়নে নির্মিত ২০টি আধাপাকা ঘরসহ মোট ৪৫টি কাঁচা বসতভিটা। ঢেউয়ের কারণে অনেকের ঘরের বেড়া ভেঙে গেছে, ঘরও যে কোনো সময় ভেঙে যেতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দা রুবেল মিয়া জানান, গ্রামের চারদিক থেকেই ঢেউয়ের আঘাতে অনেক বাড়ির উঠান, রান্নাঘর ও শৌচাগারের মাটি ভেঙে গেছে। প্রতি বছর এভাবে ভাঙতে থাকলে গ্রামের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। তারা গ্রাম প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণে সরকারের সুনজর প্রত্যাশা করছেন। দীর্ঘস্থায়ী বন্যা ও হাওরের ঢেউয়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রামের মানুষ। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছেন তারা।
গ্রামের বাসিন্দা আক্কেব আলী বলেন, এভাবে প্রতি বছর বন্যায় বাড়ির মাটি ঢেউয়ের আঘাতে ভেঙে যায়। গত বছর তিনি তার বাড়িতে ৪০ হাজার টাকার মাটি কাটালেও ঢেউয়ের আঘাতে সব মাটি ভেঙে হাওরে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, গ্রামের সামনে গজতলা হাওরের উত্তাল ঢেউ সরাসরি আঘাত হানে। তাই আমাদের গ্রামটি রক্ষায় একটি প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণে সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের বিশেষ অনুরোধ জানাই।
উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন বলেন, “হাওরের ঢেউয়ে ভাঙনকবলিত গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে সবের তালিকা করে গ্রাম প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ প্রকল্পের ডিপিপি করা হচ্ছে। হাওর এলাকায় বেশি ঢেউ আঘাত হানে এমন সব গ্রামে ‘ভিলেজ প্রটেকশন ওয়াল’ বা গ্রাম প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের পরিকল্পনা করেছি, অচিরেই কাজ শুরু হবে।”
এ রহমান

মন্তব্য করুন: