ডাকসু নির্বাচন
শিবির-এনসিপি সম্পর্কে টানাপোড়েন

দেশে গত বছরের সরকার পতন আন্দোলনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করলেও ইসলামী ছাত্রশিবির ও নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) মধ্যে দূরত্ব এখন প্রকাশ্যে। বিশেষ করে ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে মতানৈক্য আরও তীব্র হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে একে অপরকে উদ্দেশ করে দেওয়া মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়ায় দুই দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও তর্ক-বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি সামনে আরও বাড়তে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে উভয় সংগঠনের মধ্যে যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে, তা মূলত নেতৃত্বের জায়গা নিয়েই।
এনসিপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে শিবির পক্ষ একচেটিয়াভাবে নেতৃত্ব দাবি করছে, যেখানে এনসিপির অনেক নেতা নেপথ্যে সক্রিয় ছিলেন।
সম্প্রতি এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম তার সামাজিক মাধ্যমে শিবির নেতা সাদিক কায়েমকে নিয়ে একটি মন্তব্য করেন, যেখানে তিনি দাবি করেন সাদিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল সমন্বয়ক ছিলেন না, বরং শিবিরের হয়ে প্রচারণায় সুবিধা নিতে এমন পরিচয় ব্যবহার করেছেন।
শিবিরপন্থীদের পক্ষ থেকে এই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে বলা হয়েছে, আন্দোলনে সাদিকের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ এবং এখন তাকে ছোট করে দেখাতে চাচ্ছে একটি মহল।ডাকসু নির্বাচনে সাদিক কায়েমের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাকেও কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা বেড়েছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শিবিরের একাংশের মতে, এনসিপি চায় ডাকসুতে তাদের ছাত্রসংগঠন ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’-এর প্যানেলকে শিবির সমর্থন করুক অথবা একটি সমন্বিত প্যানেল গঠিত হোক।
তবে এনসিপির পক্ষ থেকে এসব দাবি অস্বীকার করা হয়েছে। সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, "আমরা কারো বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছি না। বরং আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যেভাবে একতরফা কৃতিত্ব দাবি করা হচ্ছে, সেটাই আমরা তুলে ধরছি।"
এদিকে আন্দোলনের সময় নেতৃত্বদানকারী কিছু সাবেক শিবির নেতার নাম নিয়েও আলোচনা চলছে। কেউ কেউ অভিযোগ তুলেছেন, শিবিরের নেতৃত্বাধীন অংশটি এখন ঢালাওভাবে দাবি করছে যে পুরো আন্দোলন তারা চালিয়েছেন, যা বাস্তবতা থেকে দূরে।
সামাজিক মাধ্যমে এনসিপি সমর্থকদের কেউ কেউ আবার শিবির নেতাদের বিরুদ্ধে অতীতে ছাত্রলীগের সহযোগিতায় ছাত্রদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগও তুলে ধরেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, "আন্দোলনের সময় সবাই একসঙ্গে থাকলেও এখন নিজের দলের রাজনীতিই মুখ্য হয়ে উঠেছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে, ততই এই টানাপোড়েন বাড়বে।"
তিনি আরও বলেন, "আন্দোলনের সফলতা নিয়ে ভিন্নমত থাকাটাই স্বাভাবিক। এখন যে যার রাজনৈতিক অবস্থান শক্ত করতে চায়, সেখানেই মূল দ্বন্দ্ব।"
এই পরিস্থিতি দুই সংগঠনের মধ্যে ভবিষ্যত রাজনীতিতে আরও সংঘাত ডেকে আনবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ক্যাম্পাস রাজনীতি এবং আসন্ন ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে এ বিরোধ দীর্ঘমেয়াদী রূপ নিতে পারে।
ডি আর ডি

মন্তব্য করুন: