সিলেটে পাথরকাণ্ডে সিআইডির অনুসন্ধান, দুই থানায় ব্যাপক রদবদল
Post Top Ad

সিলেটে পাথরকাণ্ডে সিআইডির অনুসন্ধান, দুই থানায় ব্যাপক রদবদল

মীর্জা ইকবাল

২৭/০৮/২০২৫ ১৮:৩০:৪২

প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না: ফাইজ তাইয়েব আহমেদ

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর লুটপাটের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি এই তথ্য জানিয়েছে।


এতে বলা হয়, সিলেটের ‘সাদা পাথর’ লুটপাটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক খবরের পরিপ্রেক্ষিতে ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট, সিআইডি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী লুটপাটের ঘটনায় প্রায় ৫০ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরপর সিআইডি এই তদন্ত শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়। পরিবেশগত অপরাধ সংঘটন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অভিপ্রায়ে সাদাপাথর লুটপাটের ঘটনায় যে বা যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সারা দেশে ৫১টি কোয়ারি (পাথর, বালু ইত্যাদি উত্তোলনের নির্দিষ্ট স্থান) রয়েছে। এর মধ্যে সিলেটের কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে রয়েছে আটটি পাথর কোয়ারি। এর বাইরে সিলেটে আরো ১০টি জায়গায় পাথর রয়েছে। যেমন সাদাপাথর, জাফলং, বিছনাকান্দি ও উৎমাছড়া। এসব জায়গা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।


২০২০ সালের আগে সংরক্ষিত এলাকা বাদে সিলেটের আটটি কোয়ারি ইজারা দিয়ে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হতো। তবে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতির কারণে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোয়ারি থেকে পাথর ও বালু উত্তোলন বন্ধে নির্দেশনা দেয় সরকার।


গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর প্রকাশ্যে প্রশাসনের সামনেই লুটে নেওয়া হয় সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রেট পাথর। এরপর প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর তৎপরতায় কিছুদিন বন্ধ ছিলো লুটপাট। তবে গত মাসের শেষ দিকে লুটপাটও আরো বেড়ে যায়। ওই সময়ে মেঘালয়ের পাহাড় থেকে ঢলের সাথে বিপুল পরিমাণ পাথরও নেমে আসে। এরপর থেকে হাজারও শ্রমিক দিয়ে প্রতিদিন চলে লুটপাট। প্রতিদিন শত শত নৌকা দিয়ে লুটের পাথর নিয়ে যাওয়া হয়। সম্প্রতি এই লুটপাট নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। শুরু হয় অভিযান। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত ২৬ লাখ ঘনফুট সাদাপাথর জব্দ করা হয়েছে। অবশ্য স্থানীয়দের দাবি এই স্থান থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকার পাথর লুটে নেওয়া হয়েছে। 


এদিকে, সাদাপাথর লুটকাণ্ডে আলোচিত সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট থানায় কর্মরত ১১ জন উপপরিদর্শক (এসআই) ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রদবদল করা হয়েছে। এ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন থানায় আরো ১১ পুলিশ সদস্যকে নিয়মিত বদলি করা হয়েছে।


গত ১৩ আগস্ট কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথরে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সাদাপাথরে লুটপাটে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও আওয়ামী লীগের ৪২ জন রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দুদকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া লুটের টাকার ভাগ স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি পেত বলেও সংস্থাটি প্রতিবেদনে জানায়। ওই প্রতিবেদনে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যরা অবৈধ পাথর উত্তোলনের সিন্ডিকেটে জড়িত বলেও উল্লেখ করা হয়।


জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বদলি হওয়া ২২ জনের মধ্যে ১৩ জন এসআই, ৭ জন এএসআই এবং ২ জন কনস্টেবল রয়েছেন।


পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর এবং গোয়াইনঘাটের জাফলংসহ ওই দুই এলাকার বিভিন্ন স্থানে পাথর লুটের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা দেখা দেয়, এ কারণে থানা দুটির ১১ পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হয়। কয়েক দিনের মধ্যে ওই দুই থানার আরো কিছু পুলিশ কর্মকর্তার বদলির সম্ভাবনা রয়েছে।


সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বুধবার সকালে বলেন, গত সোমবার জেলার বিভিন্ন থানায় কর্মরত ২২ সদস্যকে রদবদল করা হয়েছে। এটি নিয়মিত বদলিরই অংশ।

মীর্জা ইকবাল

মন্তব্য করুন:

Post Bottom Ad
Sidebar Top Ad
Sidebar Botttom Ad