সুনামগঞ্জে ভুয়া সনদে সাবেক ডিআইজি’র বাবার নামে কলেজ

সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে ও ভুয়া সনদ ব্যবহার করে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার লায়েছ ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে কলেজ শাখা চালুর অভিযোগ উঠেছে। চাকরিচ্যুত পুলিশের সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ। তিনি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি ও বর্তমানে পলাতক।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জঙ্গি অর্থায়নে সন্দেহভাজন সংস্থা কাতার চ্যারিটেবল সোসাইটি (কাতার চ্যারিটি)-এর অর্থায়নে ২০১৬ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। যদিও কাতার চ্যারিটির অর্থে স্থাপিত এই বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়েছে আব্দুল বাতেনের পিতার নামে।
বেসরকারি কলেজ স্থাপন-সংক্রান্ত আইনের বিধান অনুযায়ী, নতুন কলেজ বা উচ্চ মাধ্যমিক শাখা স্থাপনের জন্য নিকটবর্তী সমমানের প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত ৬ কিলোমিটার দূরত্ব থাকতে হবে এবং এলাকায় ৭৫ হাজার জনসংখ্যা থাকা আবশ্যক। অথচ লায়েছ ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে কলেজ শাখা চালুর ক্ষেত্রে এসব শর্ত মানা হয়নি। সরকারি বিধান অনুযায়ী, দূরত্ব সনদ ইউএনও এবং জনসংখ্যা-সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত হতে হয়।
মধ্যনগরের ইউএনও উজ্জ্বল রায় বলেন, "লায়েছ ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বংশীকুন্ডা কলেজের দূরত্ব বড়জোর দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার।"
মধ্যনগর উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সুনামগঞ্জ জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মুশফিকুর রহমান পারভেজ জানান, মধ্যনগর উপজেলার মোট জনসংখ্যা ৯৬ হাজার ২৩৭ জন। যেহেতু প্রতিটি কলেজের জন্য ৭৫ হাজার জনসংখ্যা থাকতে হয়, সেক্ষেত্রে ২০১৩ সালে বংশীকুন্ডা কলেজ প্রতিষ্ঠার পর এ উপজেলায় আরেকটি কলেজ স্থাপনের জন্য জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রাপ্যতা থাকে না।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সব প্রতিষ্ঠানের নথি অফিসে থাকলেও লায়েছ ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কলেজ শাখার তথ্য নেই।
বিশ্বস্ত সূত্রের দাবি, পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে আব্দুল বাতেন তৎকালীন ইউএনও এবং উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তার যোগসাজশে ভুয়া দূরত্ব সনদ ও জনসংখ্যার প্রত্যয়ন তৈরি করেন। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় এসব ভুয়া সনদের ভিত্তিতে লায়েছ ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে কলেজ শাখার পাঠদানের অনুমোদন নেন। বাস্তবে বংশীকুন্ডা কলেজ থেকে এই বিদ্যালয়ের দূরত্ব মাত্র আড়াই কিলোমিটার।
অভিযোগ রয়েছে, আব্দুল বাতেন কাতার চ্যারিটির টাকায় ওই বিদ্যালয়ের জন্য জমি ক্রয়, ভবন নির্মাণসহ যাবতীয় আর্থিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিষ্ঠানের নাম বাবার নামে রাখেন। এছাড়া কাতার চ্যারিটির অর্থায়নে তার নিয়ন্ত্রণে মায়ের নামে একটি মাদ্রাসা স্থাপন, ভূমিহীনদের জন্য গুচ্ছগ্রাম ও বহুতল ভবন নির্মাণসহ একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করেন। এসব প্রকল্প থেকে বাতেন ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রায় শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।
জানা গেছে, ঘুষ-দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সন্দেহভাজন লেনদেনের অভিযোগে স্ত্রীসহ আব্দুল বাতেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুটি মামলা চলমান রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, সীমান্ত চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে অনুমোদনবিহীন পশুর হাট পরিচালনাসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে আব্দুল বাতেন ও তার পরিবারের সম্পৃক্ততা ওপেন সিক্রেট।
এ বিষয়ে আব্দুল বাতেনের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি পলাতক থাকায় যোগাযোগ সম্ভব হয়নি এবং পরিবারের কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড, সিলেট-এর চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, "ভুয়া সনদ ও মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে কলেজ শাখা চালুর অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
এ রহমান

মন্তব্য করুন: