সময়ের এক জীবন্ত স্মারক: জকিগঞ্জে কাঠের তৈরি টংঘি ঘর

জকিগঞ্জ উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বাটইশাইল গ্রামের বড় বাড়ি একসময় ছিল পারিবারিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। এই বাড়ির আঙিনায় এককালে দাঁড়িয়ে ছিল চারটি টংঘি ঘর — সবকটিই ছিল সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি, দক্ষ কারিগরের নিপুণতায় গড়া একেকটি শিল্পকর্ম।
এই টংঘি ঘরগুলো ছিল কেবল বৈঠকখানা স্থান নয়, বরং জীবন্ত ইতিহাসের ধারক। এখান থেকেই শুরু হয়েছিল গ্রামের প্রাথমিক শিক্ষার যাত্রা — একজন শিক্ষক, হাতে খাতা-কলম আর কৌতূহলী কয়েকজন শিশু। এই ঘরেই অনুষ্ঠিত হতো আশপাশের এলাকার সালিশি বৈঠক, যেখানে সমাধান হতো পারিবারিক ও সামাজিক নানা বিরোধ।
কিন্তু সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছে সেই তিনটি কাঠের ঘর। মানুষের অবহেলা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং সময়ের নিষ্ঠুরতায় একে একে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে তারা। এখন সেগুলোর চিহ্ন নেই, শুধু স্মৃতির পাতায় রয়ে গেছে কিছু গল্প, কিছু নাম। তবু একটি টংঘি ঘর আজও টিকে আছে — বহু যুগ পেরিয়ে, রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ের আঘাত সহ্য করে, নিরবে দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। যেন বলে ওঠে:
“আমি দেখেছি অতীতের গৌরব, আমি বয়ে এনেছি ইতিহাসের ধ্বনি।”
এই কাঠের ঘরটি কেবল একটি পুরোনো কাঠামো নয় — এটি বড় বাড়ির শেকড়, ঐতিহ্যের প্রতীক, এবং হারিয়ে যাওয়া সময়ের নীরব সাক্ষ্য।
লেখক : জুবের আহমদ লস্কর
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, চৌধুরী এন্ড লস্কর ট্রাস্ট
মীর্জা ইকবাল

মন্তব্য করুন: