শাল্লায় গিরিধর উচ্চ বিদ্যালয়
খেলার মাঠ ছাত্রছাত্রীদের ফিরিয়ে দিন

সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলা স্থিত গিরিধর উচ্চ বিদ্যালয়, নয়াগাঁও একটি প্রাচীন বিদ্যাপীঠ। এটি শাল্লা উপজেলায় স্থাপিত ১ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়। আজ থেকে ৬৭ বছর পূর্বে ০২/০১/১৯৫৮ খ্রি. তারিখ এলাকার শিক্ষানুরাগী মানুষের প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তি বাবু মহেন্দ্র চন্দ্র দাশ বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা।
এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১০ বছর পর ২৪/১/১৯৬৮ খ্রি. তারিখ শাহীদ আলী পাইলট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, ২১ বছর পর ০১/০১/১৯৭৯ খ্রি. তারিখ শ্যামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়, ২৩ বছর পর ২৫/১/১৯৮১ খ্রি তারিখ গোবিন্দ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে শাল্লায় ১৫ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২ টি মাদ্রাসা ও একটি ডিগ্রী কলেজ রয়েছে।
ভাটি এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে গিরিধর উচ্চ বিদ্যালয়ের রয়েছে অত্যুজ্জ্বল ভূমিকা। আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলা হতে ছাত্রছাত্রীরা এলাকার আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করত। বর্ষায় আশেপাশের প্রতিটি গ্রাম হতে একাধিক নৌকাযোগে ছাত্রীছাত্রীরা বিদ্যালয়ে যেত। নৌকায় নৌকায় বিদ্যালয়ের দক্ষিণদিকটা একেবারে ছেয়ে থাকত। এক নৌকার জন্য অপর নৌকা অনেক সময় পাড়ে ভিড়ত না। আমরা নৌকায় নৌকায় পা রেখে পাড়ে উঠতাম। বিদ্যালয়ে আসা এবং ছুটির পর নিজ নিজ গ্রামের উদ্দেশ্যে একযোগে যাত্রা করা। এ এক বিরাট উৎসব যেন! মেয়েরা ও শিক্ষকগন নৌকার মাঝে তক্তা/ বাশের চটি দিয়ে তৈরী বিশেষ ব্যবস্থা/মাচাইলে বসে থাকতেন। আমরা ছেলেরা পালা করে দাঁড় টানতাম, নৌকা বাইতাম। ক্যাচাং ক্যাচাং দাঁড় টানার শব্দ! ঢেউয়ের তালে তালে দুলত নৌকা। যেদিন বাতাস অনুকূলে থাকত, আনন্দের সীমা থাকত না। পাল টাঙ্গিয়ে দিতাম, দাঁড় টানার ঝামেলা হতে মুক্তি!
হেমন্তে দলবেঁধে হেঁটে হেঁটে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা। ৬ মাস নাও, ৬ মাস পাও। বিদ্যালয় ভবনের সামনের খোলা জায়গা ছাড়াও রয়েছে বিরাট খেলার মাঠ। খেলাধুলা, নাটকসহ নানা আয়োজন! অসাধারণ উপভোগ্য ছিল সবকিছু! কতই না আনন্দময় ছিল!
ওমা কোথায় কী হয়ে গেল, কোথায় কী ঘটে গেল! ছাত্রছাত্রীরা শুনি এখন আর নিয়মিত স্কুলে যায় না! বর্ষায় ঘরে ঘরে ইঞ্জিনের নৌকা, ট্রলার। ব্যক্তিগত, ভাড়ায় চালিত, কোনকিছুরই অভাব নাই। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা স্কুলমুখী নয়! পড়াশুনার পরিবেশ নিয়ে নানা কথা শুনা যায়! বিত্তবানেরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের শহরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। পড়ে রইলেন তাঁরা যাদের সামর্থ্য নেই!
বিদ্যালয়ে এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজের কোন কথা শুনা যায় না। বিদ্যালয়ের একমাত্র খেলার মাঠটি গত ৩ বছর যাবৎ ঠিকাদারের বালু-পাথরের দখলে। শিক্ষকমন্ডলী, ম্যানেজিং কমিটি কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঘুমিয়ে থাকেন কিংবা অতিব গুরুত্বপূর্ণ কাজে অতি ব্যস্ততার দরূন খেয়াল করার সময় পান না! উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ যত সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা আছেন সকলেই এই বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে জেলা সদরে যাতায়াত করেন। কারো চোখে কিছু পড়ে না! আমি বালু পাথর অপসারণ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শাল্লা, সুনামগঞ্জ বরাবরে পিটিশন দিলাম। নড়াচড়ার কথা শুনেছি শুধু! বালু-পাথর পূর্ববৎ পড়ে রইল! প্রায় দুইমাস পর সুনামগঞ্জের সুনামকন্ঠ পত্রিকায় রিপোর্ট হলো। কিছুদিন হলো শুনেছি ঠিকাদার বালু-পাথর সরিয়েছে। এলাকার কয়েকজন বলেছেন, বালু-পাথর রাখার কারনে মাঠটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ মাস সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরেও আমার দাখিলকৃত পিটিশনটি নিষ্পত্তি না হওয়ায় কয়েকদিন আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শাল্লা কে নিষ্পত্তি করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।
এদিকে গিরিধর উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসির ফলাফলের ক্রমাবনতির ধারাবাহিকতায় এবারও অর্থাৎ এসএসসি/২০২৫ এর ফলাফলও খারাপ। একটিও এ প্লাস নেই। ৭৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস ৪৫ জন। পাসের হার ৬০.৮১%। এ নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। কীভাবে অবস্থার উন্নতি করা যায়। আমরা প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা যেমন কথাবার্তা বলছি তেমনি হেড স্যারকেও দেখলাম কয়েকটি গ্রামে গিয়ে কথাবার্তা বলছেন। দেখে ভালো লেগেছে খুব। এমনটা তো পূর্বে কখনোই দেখিনি।
ও মা! গতকাল (২৫/৭/২০২৫ খ্রি.) এলাকায় মাইকিং, পরের দিন অর্থাৎ ২৬/৭/২০২৫ খ্রি. গিরিধর উচ্চ বিদ্যালয়ে সভা হবে, অভিভাবকদের নিয়ে। না, পাঠক আপনারা যা ভাবছেন তা নয়। পরীক্ষার ফলাফল বিপর্যয় নিয়ে কোন সভা নয়! পড়াশুনার মানোন্নয়ন কিংবা ছাত্রউপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য সভা নয়! ঠিকাদারকে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ইট-বালু-পাথর আরও কয়েক বছরের জন্য রাখতে দেয়া যায় কি না - এ সংক্রান্ত সভা!!!!
সিলেট থেকে খবর নিয়ে জেনেছি, দীর্ঘ সময় ধরে কমবেশি দুপুর ১২-০০ টা হতে বিকাল ০৪-০০ টা পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক আনন্দ মোহন চৌধুরী, ম্যানেজিং কমিটির (এডহক) সভাপতি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বিশ্বপতি চক্রবর্তী এর উপস্থিতিতে সভা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় আগামী ০২ বছরের জন্য ০৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ঠিকাদারকে ইট-বালু-পাথর বিদ্যালয় মাঠে রাখতে দেয়া হবে। এখানে একটা "যদি" আছে। যদি ঠিকাদার দুএকদিনের মধ্যে উক্ত প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন করেন তবেই বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ পাবে!
ঠিকাদারের প্রভাব, প্রতিপত্তি ও সম্মোহনের ক্ষমতা দেখে আশ্চর্য না হয়ে উপায় নেই! গত ০৫ বছরে গিরিধর উচ্চ বিদ্যালয়ে কয়টি অভিভাবক সভা হয়েছে, কারো জানা আছে?
গত ০৫ বছরের এসএসসির ফলাফলশীট আমি দেখেছি। খুবই বাজে অবস্থা। পড়াশুনার বিষয়ে মাইকিং করে সভা হয়েছে, এমন কথা তো কখনও শুনিনি!
আমার বিনীত অনুরোধ, ছাত্রছাত্রীদের খেলার মাঠ, ছাত্রছাত্রীদের ফিরিয়ে দিন। সবকিছু নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে নেই।
আজকে যারা বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ টাকার বিনিময়ে ঠিকাদারকে দুবছরের জন্য দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, দয়াকরে আপনারা এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি পুণঃর্বিবেচনা করুন- বিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে এটা আমার একান্ত দাবী, আপনাদের নিকট আমার একান্ত প্রার্থনা।
ডি আর ডি

মন্তব্য করুন: