ঢাকা-সিলেট রেলপথে টিকিটের দৌরাত্ব,ভোগান্তি চরমে

সম্প্রতি কেউ যদি ঢাকা সিলেট রুটে সড়কপথে যাত্রা করে থাকেন, তবে তাদের কিছু বলার দরকার নেই। ৫-৬ ঘন্টার যাত্রাপথ একটি আহ্নিকগতি অতিক্রম করে। ফলে এই গন্তব্যের জন্য অধিকাংশই এখন রেলপথের উপর নির্ভর করেন। যখন সড়কপথ জনিত সমস্যার কারণে এতো নির্ভরশীলতা ছিলোনা তখনই টিকেট ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিলো। কোনরকমে যোগাড় করা গেলেও আসনে বসা পর্যন্তই। স্ট্যান্ডিং অবস্থায় মানুষের উপর মানুষ ঠেসে নিজের বসে থাকাটা প্রায় শাস্তির মতো হয়ে দাঁড়াতো।
একবার এক এটেনডেন্সকে কমপ্লেইন করে চমৎকৃত হবার মতো উত্তর পেয়েছিলাম। কর্তৃপক্ষ নাকি তাদের টার্গেট দিয়ে দেয়৷ স্ট্যান্ডিং লোকেদের কাছ থেকে সেই টার্গেট আদায় করতে হয়। যদিও আমার কাছে খুব স্পষ্ট হয় নি সেই কর্তৃপক্ষ আসলে কারা। আমার আজকের বক্তব্য এসব নিয়ে নয়।বরং আরও অভিনব।
রেলওয়ে এ্যাপ থেকে যারা টিকেট কাটেন তারা জানেন, সাধারণত দশদিন আগে ওয়েবসাইটে টিকেট ছাড়া হয়। আপনি সকাল আট্টার আগে কিংবা রাত জেগে এ্যাপে ঢুকে বসে থাকবেন, টিকেট বুকিং করে ওটিপি দিতে দিতে দেখবেন টিকেট নেই৷ এবং দশ মিনিটের মধ্যে একটা টিকেটও নেই।এক্ষেত্রে আমাদের মতো নিত্য যাত্রীদের ভরসা কালোবাজারি। বেশ কয়েকজনের নাম্বার টাম্বার রাখি। তারা এক দিন আগেও টিকেট দিতে পারে। তো ৩ আগস্ট ২০২৫ আমার ছেলেমেয়ে হবিগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফিরবে। যাওয়ার আগেই আসার টিকেট কাটতে চেয়েছি, পাইনি। ওদের মামাদের বলে দিয়েছি, ম্যানেজ করতে। ম্যানেজ মানে কালোবাজার। জানি হবে। ৫০০ টাকার টিকেট ৮০০ টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয়েছে। ওরা যথারীতি ট্রেনে উঠেছে। দুইজনের দুই বগি। 'ক' আর 'ঠ'। কাব্য নিজের বগিতে না গিয়ে সারারাস্তা ব্যাগে বসে পদ্যকে পাহারা দিয়েছে,কারণ বাসে, ট্রেনে কিংবা প্রাইভেট গাড়িতে পদ্য সিটে বসামাত্রই ঘুম।যাহোক এ পর্যন্ত ঠিক আছে।
কমলাপুর নেমে গেইট পার হওয়ার সময়, কাব্য অন্যমনস্কতায় আগে পার হয়ে গেলে পদ্য তার ভাইয়াকে ধমক দিয়ে ফিরিয়ে এনেছে টিকেট দেখানোর জন্য।
টিকেট দেখানো মাত্র,গেইটম্যান দুজনকে আটকে দিলো। তারা ব্ল্যাকে টিকেট করেছে। এখন তিন হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। বার্গেনিং করার মতো ম্যাচিউরিটি নেই তাদের। কাঁদো কাঁদো গলায় ফোন দিলো আমাকে,মা আমাদের তিন হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। বললাম,ফোনটা দাও। আমি নিজে কথা না বলে কাছে থাকা একজন পুরুষ সুহৃদকে কথা বলতে দিলাম। উনি যথেষ্ট ভদ্রভাবে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, এরা তো বিণাটিকেটে আসেনি,অনলাইনে টিকেট তো দশ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়, এরা আন্ডার এইজ এদের টিকেট তো অন্যরাই কাটবে ইত্যাদি। লোকটি ওপাশ থেকে কী বললো শুনতে পাইনি,তবে বুঝলাম কনভিন্স হয়নি। মেয়েকে ফোন দিয়ে জানলাম,ওদের অপরাধী সাব্যস্থ করে কোনো উর্দ্ধতন কর্মকর্তার কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভর দুপুরে অফিসে বসে বুঝতে পারছিলাম না কী করবো।
যাহোক ঘটনা এখানে শেষ। উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ওদের ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু আমার প্রশ্ন অনলাইনের টিকেট কেন দশ মিনিটে ভ্যানিশ হয়ে যায়? কারা কিনে এসব টিকেট? অনলাইনের টিকেট কালোবাজারে পাওয়া যায় কেন? ৫০০ টাকার টিকেট ৮০০ টাকা দিয়ে কিনতে হয় যাত্রীর। তার উপর এই হয়রানি। কতো রাঘব বোয়াল কতো কিছু করে পার হয়ে যায় এদেশে। আর ধরলো ইনোসেন্ট বাচ্চা দুটোকে! বাচ্চা দুটোর উপর যে মানসিক ট্রমা গেলো এর প্রতিকার কী?
এ রহমান

মন্তব্য করুন: