মাদরাসা অনুপস্থিত থেকে টিসিবি’র পন্য বিক্রী
কুলাউড়ায় মাদ্রাসা প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের হাজী সিরাজ উদ্দিন আহমদিয়া দাখিল মাদ্রাসার প্রধান মোঃ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতিপূর্বেও একবার অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় মুচলেখা দিয়ে রক্ষা পেয়েছেন তিনি। এছাড়াও মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থেকে টিসিবি পন্য বিক্রির অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে মাদ্রাসাটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
মাদ্রাসা প্রধানের এসব অভিযোগ নিয়ে পরিচালনা কমিটি গত ১৬ জুলাই এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে এক সাধারণ সভা ও অভিভাবক সমাবেশ করেন। সভায় মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ ইচ্ছামাফিক মাদ্রাসায় উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি প্রমানিত হয়।
উনার অনুপস্থিতির কারণে বিশৃঙ্খল পরিবেশ ও পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটে। সরকারি অনুদান ইচ্ছামাফিক খরচ, মাদ্রাসার জমি নিলাম ও অন্যান্য উৎস থেকে আয়কৃত টাকার হদিস দেখাতে পারেন নাই তিনি। অবহেলার কারণে বিগত কয়েক বছর থেকে দাখিল পরীক্ষার ফলাফল চরম অবনতি হচ্ছে।
৪৭তম বিসিএসের প্রিলি পরীক্ষা শুক্রবার
এছাড়াও ইবতেদায়ী শাখায় কাউকে অবগত না করে কমিটি গঠন করেন তিনি। উক্ত সভায় মাদ্রাসা প্রধান মো: রফিকুল ইসলাম কমিটির সম্মুখে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোন সদুত্তোর দিতে পারেন নি বলে রেজুলেশনে উল্লেখ করা হয়েছে।
মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের অন্যতম সদস্য, আমেরিকা প্রবাসী মোহাম্মদ আমিনুল হক আজাদ জানান, ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ মাদ্রাসাটি এলাকায় ইসলামি ও সাধারণ শিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক ও লজ্জাজনক যে, মাদ্রাসা প্রধান রফিকুল
ইসলামের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে এসবের প্রমাণ স্পষ্টভাবে প্রকাশ হওয়ার পরেও তিনি স্বপদে থাকার জন্য নানাভাবে কুটচালে মগ্ন রয়েছেন।
সম্প্রতি কমিটির সতর্কবার্তা ও ছয় মাসের পর্যবেক্ষণকালেও তিনি নিয়ম ভঙ্গ করে গত ৩০ জুলাই অসুস্থতার অজুহাতে সকালে মাদ্রাসা ত্যাগ করেন। একটু পরেই কুলাউড়া পৌরসভায় সরকারি টিসিবির চাল-ডাল ওজনে কম দেওয়ায় উপস্থিত মানুষের রোষানলে পড়েন। ইউএনও মহোদয় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। বিষয়টি আমরা সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দেখেছি।
যা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম ভঙ্গ, দায়িত্বে অবহেলা এবং নৈতিক অধঃপতনের জঘন্য দৃষ্টান্ত। এর পরও তিনি বিদায় মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে স্থানীয় কিছু লোক নিয়ে সভা করে মাদ্রাসা বন্ধ করার পরিকল্পনাও করছেন। গত চার বছরে তাঁর অবহেলার কারণে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রায় শূন্য হয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানের জন্য ভয়াবহ কলঙ্ক।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল মালিক জানান, মাদ্রাসার সুপার মো: রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ শুনে গত ১৬ জুলাই সবাইকে নিয়ে জরুরি সভা করা হয়। এতে মাদ্রাসার অর্থ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ প্রমাণিতও হয়।
তিনি মুচলেখা দিয়েছিলেন পরবর্তীতে আর এমন হবে না। কিন্তু এর ২ সপ্তাহ পরেই (৩০ জুলাই) কুলাউড়া পৌরসভায় টিসিবির পণ্য বিক্রয়কালে ওজনে কম দেওয়ায় মানুষের রোষানলে পড়েন। বিষয়টি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতাপক্ষ এবং এলাকার লোকজন বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখে ক্ষুব্ধ হন। এমন কাজের ফলে মাদ্রাসা এবং এলাকার মানসম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতাপক্ষ এখন আর উনাকে রাখতে চাচ্ছে না, এখানে আমার কিছু করার নেই।
এব্যাপারে অভিযুক্ত মাদ্রাসা প্রধান মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, আমি এই মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছি। ইদানিং তারা মাদ্রাসাকে দাখিল পর্যন্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। আমি ইবতেদায়ী প্রধান হিসেবে থাকার কথা। আর সুপার হিসেবে একজনকে নিয়োগ দেবেন। এখন প্রতিষ্ঠাতারা আমাকে রাখবে না। আমার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট কোন অভিযোগই নাই।
তাহির আহমদ

মন্তব্য করুন: