দ্বিতীয় মেয়াদে শাহানা হানিফ পুনঃনির্বাচিত
Post Top Ad

নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল নির্বাচন

দ্বিতীয় মেয়াদে শাহানা হানিফ পুনঃনির্বাচিত

প্রথম ডেস্ক

২৫/০৬/২০২৫ ১১:২১:৫৬

প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না: ফাইজ তাইয়েব আহমেদ

নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের ৩৯ নম্বর আসনে শাহানা হানিফের পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন। লড়াকু এ বাংলাদেশি আমেরিকান তরুণী রাজনৈতিক মানচিত্রে স্পষ্ট বার্তা দিতে পেরেছেন। প্রগতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক, এবং জনভিত্তিক রাজনীতিই আগামী দিনের পথ।

শাহান হানিফ হচ্ছেন এক নতুন ধরনের নেতৃত্বের প্রতিনিধি। একজন বাংলাদেশি অভিবাসীর কন্যা, একজন লুপাস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি হিসেবে তিনি নিজেই বহু প্রতিকূলতা পেরিয়ে এসেছেন। এই বাস্তব অভিজ্ঞতা তাকে শুধু একজন নেতা নয়, একজন সংগ্রামী প্রতিনিধি করে তুলেছে। তার রাজনীতি এসেছে তৃণমুল অভিজ্ঞতা থেকে, কোনো কর্পোরেট প্রভাব নয়। তার সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় জনগণ, অধিকারকামী সংগঠন এবং তরুণ প্রজন্মের আশা-আকাঙ্ক্ষা।


তার জয়ের পরিসংখ্যান অবাক করার মতো। প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীদের পিছনে ফেলেছেন। নিউইয়র্ক টাইমসের মতে, এই জয় ব্রুকলিনের রাজনৈতিক চেতনায় একটি নতুন ঢেউ নিয়ে এসেছে। শিক্ষিত ও অভিজাত প্রতিদ্বন্দ্বীরা অনেক বেশি অর্থসংস্থান এবং প্রতিষ্ঠানের সমর্থন পেলেও, শাহানার পাশে ছিল দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়ানো স্বেচ্ছাসেবকরা, ছোট ছোট দাতা এবং ঐক্যের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা জনগণের মঞ্চ।


তার প্রচারণায় মূল ইস্যুগুলো ছিল—সাশ্রয়ী আবাসন, অভিবাসী অধিকার, জনস্বাস্থ্য ও পুলিশ সংস্কার। কোভিড পরবর্তী নিউইয়র্কে এই ইস্যুগুলোর গুরুত্ব ছিল প্রবল। শেহানার প্রথম মেয়াদে এগুলোর ওপর ভিত্তি করে যে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা তার নেতৃত্বকে বাস্তবভিত্তিক ও কার্যকর বলেই তুলে ধরে।


এই নির্বাচনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—তার প্রতি নিউইয়র্কের প্রগতিশীল সংগঠন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং ইউনিয়নগুলোর নিরঙ্কুশ সমর্থন। কংগ্রেসওমেন আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ, ব্র্যাড ল্যান্ডার, ওয়ার্কিং ফ্যামিলিস পার্টি—এরা প্রত্যেকেই শাহানার পাশে দাঁড়িয়েছেন। এটি হয়ে উঠেছিল এক বিস্তৃত প্রগতিশীল ফ্রন্টের রাজনৈতিক একাত্মতা।


প্রাইমারি নির্বাচনে শাহানা হানিফের ফলাফল একটি দিক ভাবিয়ে তোলে—সাধারণ মানুষের রাজনীতিতে ফিরে আসা। টাকা ও মিডিয়া নয়, কাজ আর বিশ্বাস জিতেছে। এটি শুধুই ব্রুকলিনের নয়, নিউইয়র্কের নাগরিক সমাজের প্রতি আস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা।

শাহানা বলেছেন, তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে আরও জোরালোভাবে কাজ করবেন—বিশেষ করে টেন্যান্ট অধিকার, স্বাস্থ্য সেবা, এবং পরিবেশবান্ধব নগর গঠনে। এমনকি গর্ভপাতের অধিকার থেকে শুরু করে লিঙ্গ-বৈচিত্র্যের নিরাপত্তা—এসব ইস্যুতেও তিনি তার অবস্থান স্পষ্ট রেখেছেন।


এই জয় বাংলাদেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। নিউইয়র্কের মঞ্চে একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী, যিনি নিজেকে মুসলমান, অভিবাসী ও অসুস্থতা বয়ে বেড়ানো মানুষ হিসেবে পরিচিত করেন—তিনি প্রমাণ করলেন, সাহস আর সংগঠনের মাধ্যমে যেকোনো সংকট জয় করা সম্ভব। তিনি শুধু নিজের কমিউনিটির নিত্য সংঘাতে যোগ না দিয়ে লক্ষ্য স্থির করে একজন দৃঢ়চেতা রাজনৈতিক সংগঠক হয়ে উঠেছেন সাফল্যের সাথে।  


শাহানার জয় আমাদের মনে করিয়ে দেয়, রাজনীতি বড় বড় বক্তৃতার বিষয় নয়—এটি ছোট ছোট মানুষের স্বপ্ন ও জীবনযুদ্ধের সংগে জড়িত। যারা মানুষের পাশে দাঁড়ান, মানুষের কথা বলেন এবং সত্যিকারের পরিবর্তনের জন্য কাজ করেন—তাদের পেছনে মানুষ থাকে। এবং এই বিশ্বাসেই একদিন একটি শহর বদলে যেতে পারে, একটি দেশ বদলে যেতে পারে। 


২০২৫ সালের এই জয় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। রাজনীতির মঞ্চে এই বিজয় গড়ে দিল সেই পথ, যেখানে গায়ের রং, ধর্ম, লিঙ্গ, জাতি কোনো বাধা নয়—মানুষ, ন্যায় ও নিষ্ঠা হবে মূল পরিচয়। নিউইয়র্ক এখন সেই যাত্রাপথে, আর শাহানা হানিফ সেই চলার একজন পথপ্রদর্শক।

নীরব চাকলাদার

মন্তব্য করুন:

Post Bottom Ad
Sidebar Top Ad
Sidebar Botttom Ad