ধর্মীয় আদেশ একেক যুগে একক রকম পালিত হয়! কিন্তু কেন?

আবুল রহমান:
অল্পে তুষ্ট থাকতে হলে প্রচুর ধৈর্য্য ও জ্ঞানের প্রয়োজন কিন্তু শুধু জ্ঞান ও ধৈর্য্য ত সব এনে দিবে না। জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য খাদ্য ও বাসস্থানের প্রয়োজন ।আর প্রয়োজন শিক্ষা ও চিকিৎসা । সৃষ্টিকর্তা সব পারেন ও করেন। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার এই পাড়া আর করা, সবার জন্য সমান নয়। রয়েছে তাকদীরের বেষ্টিতে আবদ্ধ ।
আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, ধর্মীয় ওয়াজ নসীহত হরহামেশা করা হচ্ছে । মানুষ শুনতেছে ঢালাও ভাবে। কিন্তু ক’জন এসব বিধি বিধান আমল করতেছে । ধনী বলুন অথবা গরীব আর মধ্যবিত্তদের হিসেবে আনুন সবারই একি অবস্থা ।
১৯৮০ দশকে লেখাপড়া শেষ করে,আমি উদাসীন ভাবে ঘুরতে শুরু করলাম । পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় যে একটি দায়িত্ব আমার রয়েছে তা অনুভব করলাম না।তখন জিন্দাবাজারে আমাদের বসতি ছিল,আড্ডার জায়গা। সাথে সাথে তৎকালীন সময়ে প্রচুর ব্যবসার সুযোগ ছিল।কিন্তু কোন কিছুই আমি কাজে লাগাই নাই।বন্ধু বান্ধবদের অনুরোধে ছোটখাটো কাজ করেছি।আর সব কাজ ছিল জিন্দাবাজার ভিত্তিক ।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল,কাহের রেস্ট কর্ণার,ন্যাশনাল এভিএশন ও ফুজি কালার। আমার আব্বা ও আম্মা, আমার এই আচরণে "নাখোশ হলেন।
আমার আম্মা আমাকে একদিন ডেকে বললেন, তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেছ কি দোকানে কাজ করার জন্য ।আমি বললাম কাজ ত কাজ।আর দোকানের কাজ ত ভাল ,সাধারণ মানুষের সান্নিধ্যে থাকা যায়। শুরু হল লন্ডনের প্রবাসী জীবন আর তা ছিল ১৯৮৩ সাল।
প্রথম অবস্থায় শুরু করলাম রেস্টুরেন্টের কাজ। এই কাজ ছিল সিলটির জন্য সহজ প্রাপ্য। যুক্তরাজ্যের ও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট প্রভাব বিস্তারকারী ব্যবসা। যদিও ধর্মের দৃষ্টি, কারণে অনেকেই এর সাথে যুক্ত হন নাই ।অনেকেই আবার ,"সুরু খাই কিন্তু মুরগি খাই না!" এই নীতি অবলম্বন করেছিলেন । অনেকে ফতোয়া দিলেন জীবণ বাঁচিয়ে রাখতে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা থেকে সর্ব নিম্ন অংশ নেওয়া যায় ।(এ ব্যাপারে বিস্তারিত দেখতে পারেন, ইসলামে হালাল ও হারামের বিধান,অনুবাদ বই, মাওলানা আব্দুল রহিম, খায়ের প্রকাশনী।) পরবর্তীতে আমার আম্মা যখন লন্ডনে আসিলেন,তখন আমাদের সিলটি দের ব্যবস্থাপনায় রেস্টুরেন্ট ব্যবসা দেখে মনক্ষুন্ন হলেন।আর আমাকে বললেন, তুমি কি উচ্চ শিক্ষা করেছ,কাস্টমার কে দরজা খোলে দিতে?
প্রত্যেক মা চায় তার সন্তান এমন কাজ করুক, যা যেন মর্যাদা পূর্ণ হয়।কাল মার্কস, লিখেছিলেন, যখন মানুষ কাজ করতে শিখল, তখন সে হল একজন মর্যাদা পূর্ণ জীব।কাজ ত কাজ।তারপর মায়ের দোয়া ও আকাংখার কারণে হয়ত,আমি যুক্ত হলাম, একাউন্টিং জবে।যোগ বিয়োগ, আর কি। আর আম্মা দেখে গেলেন ,শুনে গেলেন আমার বড় ছেলে ডক্টর ছানিয়াত রহমান, বংশের প্রথম অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র হিসেবে মনোনয়ন পেল। নিশ্চয়ই তা ছিল আমার জন্য বিরাট অর্জন ।আর আমার অতীত ইতিহাসের সব উচ্চ শিক্ষার গ্লানি, আর কাহারও কাছে না হোক আমার মার কাছে তা বিরাট অংকে লাগব হয়েছিল । ঠিক এইভাবে এই লেখাটি হবে আমি আশা করি নাই, হয়ত চাই নাই ।কিন্তু আজ যখন হাঁটতে বাহির হলাম (আমার নূতন অভ্যাস প্রতিদিন ১২ কিঃমিঃ
হাঁটি) তখন হাতের বাঁদিকে নয়ন আটকে গেল,দুটো রেস্টুরেন্টে,দুটোর অবস্থান যুক্তরাজ্যের একি শহরে ,লুইসাম।একটি এখনও বিদ্যমান(পিছনে রেখে আমার ছবি) অন্যটি নাই ।
এই দুটি রেস্টুরেন্টে কাজ করেন ,বাংলাদেশ থেকে আগত অনেক ছাত্র যারা পরবর্তীতে, সমাজের ও রাষ্ট্রীয় উচ্চ পদে সমাসীন হয়েছিলেন ।আর আমার মত হয়ত অনেক বাবা,যাদের সন্তান সন্ততি আজ দেশে বিদেশে মানবতার অসাধারণ উদাহরণ ।
(লেখাটি সিলটিজ গ্রুপ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে)
নীরব চাকলাদার

মন্তব্য করুন: