নিজের শর্তে যারা বাঁচে তারাই ভাগ্যবান

নিজের শর্তে যারা বাঁচে তারা সত্যিই ভাগ্যবান। হ্যাঁ, এমন হতেই পারে যে তাদের হয়ত এভাবে বেঁচে থাকার জন্য অনেকটা মূল্য দিতে হয়। হয়ত দিনগুলো কাটে হাড় ভাঙা খাটুনিতে। হয়ত পাশে কেউ থাকে না; একা থাকতে হয়। হয়ত প্রতিনিয়ত লড়াই চলে জীবনের দাবির সাথে আর্থিক অনটনের। কিন্তু তবুও যেহেতু নিজের ইচ্ছেয় এই জীবন বেছে নেয়া, তাই হয়ত তাদের জীবন নিয়ে তেমন আফশোস হয় না।
তবে আরও অনেক মানুষ আছে যারা নিজেদের ইচ্ছেয় বাঁচতে ভুলে গেছে। ভুলে গেছে নিজেদের চাওয়া পাওয়া। তারা প্রতিনিয়ত মানিয়ে চলছে- পরিস্থিতির সাথে , চারপাশের মানুষগুলোর সাথে; জীবনের সাথে। মানাতে গিয়ে কষ্ট পাচ্ছে তবুও কান্না গিলে নিচ্ছে। তাদের চোখের জলের খোঁজ রাখে শুধু তাদের মাথার বালিশ। তারা কাউকে আঁকড়ে ধরতে চেয়েও পায়নি নিরাপত্তার ছায়া; সুদিনের অপেক্ষায় দিন গুণেছে বছরের পর বছর তবুও সব বন্ধন ছিন্ন করে চলে যেতে পারেনি! হ্যাঁ, তারা পারেনি! পারেনি নিজেদের শর্তে জীবন কাটাতে। হয়ত পরিস্থিতি ছিল না; হয়ত সুযোগ ছিল না। হয়ত সাহস ছিল না।
আমি চাই সেই সব মানুষগুলো নিজের জন্য যেন মাঝে মাঝে অন্তত একটা দিন বরাদ্দ করে। যেদিন সে সব দায়িত্ব , সব দায়বদ্ধতাকে সাময়িকভাবে দূরে ঠেলে দিতে পারবে। একটা নির্ভার মন নিয়ে সময় কাটাতে পারবে সেই মানুষগুলোর সাথে যারা তাকে শর্ত ছাড়া ভালবাসে।
তোমরা হয়ত বলবে, বাবা- মা ছাড়া নিঃশর্ত ভালবাসা আর কে দেয়? আর বাবা-মা তো সারাজীবন থাকে না! বড় সত্যি কথা! বাবা-মা ছাড়া নিঃশর্ত এবং নিঃস্বার্থ ভালবাসা বোধহয় খুব অল্প মানুষেরই কপালে জোটে। কিন্তু তবুও... তবুও আমি বলব যে তোমরা কিন্তু আর একজনকে ঠিক খেয়াল করতে পারো না যে বাবা- মায়ের মত কখনও তাদের চেয়েও বেশি করে তোমাকে নিঃশর্ত ভালবাসা দেয়। সে হল তুমি নিজে।
ভেবে দেখো- যে আমাদের সবচেয়ে বেশি ভালবাসে, আমৃত্যু আমাদের সঙ্গে থাকে, সেই আমার আমিকে আমরা কতটুকু সময় দিই? কথা বলি নিজের সাথে? মনের গহনে ডুব দিয়ে খোঁজ নিই যে- আমরা সত্যিই কেমন আছি?
আমি চাই সেই বিশেষ দিনটাতে নাই বা থাকল ভালবাসার মানুষ, নাই বা কেউ আপন করল, তবুও এইদিন আমরা একটু নিজেকে খুঁজে দেখি। কেমন আছি আমি? ততটা ভাল নেই? কী করলে ভাল থাকব? খুঁজে আনি সেই পরশপাথর যার স্পর্শে হৃদয় সোনা হবে। হয়ত ততটা সাধ্য নেই। কিন্তু আরও একটু যদি চেষ্টা করি! যদি আরও একটু সাধটাকে সঙ্কুচিত করি- তাহলে কি মিল হবে না সাধ আর সাধ্যের? এই সব প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতেই মাঝে মাঝে নিজের সাথে কাটানো দরকার। নিজেকে ভালবাসা দরকার। তাহলে বোধহয় জীবনের সবটা ফাঁকি হয় না। জীবনদেবতা তখন হয়ত অভাগার জন্য ও কিছু রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ বরাদ্দ করে।
লেখক : মমতা দে, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
নীরব চাকলাদার

মন্তব্য করুন: