আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টির তীব্র প্রতিবাদ
লন্ডনে ‘সিলেট-চারখাই-শেওলা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প‘ নিয়ে সভা

‘সিলেট–চারখাই–শেওলা মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ কাজে সিলেট জেলা প্রশাসকের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রবাসী বিয়ানীবাজার উপজেলাবাসীর সংগঠন ‘বিয়ানীবাজার জনকল্যাণ সমিতি ইউকে’। সিলেট জেলা প্রশাসকের সিলেট বিদ্বেষী ভূমিকার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নপুষ্ঠ এই প্রকল্প অবিলম্বে শুরু করা না হলে দেশে- বিদেশে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দেওয়া হয়।
৩১ জুলাই বৃহম্পতিবার যুক্তরাজ্যের লণ্ডনের দ্যা লেইন রেস্টুরেন্টে ‘সিলেট–চারখাই–শেওলা মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ কাজে বাধার তীব্র প্রতিবাদ’ শিরোনামে এ সভার আয়োজন করা হয়। সমিতির সভাপতি আনোয়ার আহমদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সুবিনের সঞ্চালনায় সভায় সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভার শুরুতে বক্তারা বলেন, শেওলা স্থলবন্দরকে প্রাধান্য দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন সহজ করার লক্ষ্যে ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘সিলেট-চারখাই-শেওলা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প’ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রায় ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের এ মহাসড়কের কাজে খরচ হবে চার হাজার ২৫৭ কোটি সাত লাখ টাকা। এর মধ্যে দুই হাজার ৮৮৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দেবে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পটি ১ জানুয়ারি ২০২৩ সাল থেকে শুরু হয়ে ২০২৭ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা।
বক্তারা বলেন, প্রায় দুই বছর চলে যাচ্ছে কিন্তু চারলেন সেতু ও অ্যাপ্রোচ সড়কের ভূমি অধিগ্র্রহণ কাজ শুরু হয়নি। সম্প্রতি জাতীয় দৈনিক সমকালে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, সিলেটের জেলা প্রশাসক চার লেন মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত চার লেন সেতু ও অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ এবং অ্যাপ্রোচ সড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি ‘দুই উপজেলার কিছু সংখ্যক যাত্রী পরিবহন ছাড়া এ রাস্তায় তেমন যান চলাচল নেই মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি বাতিলের ষড়যন্ত্র করছেন।
সভায় সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ছরওয়ার আহমদ বলেন, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এ সড়ক একটি আন্তদেশীয় বাণিজ্য সড়ক। যার অর্থনৈতিক গুরুত্ব ব্রিটিশ আমল থেকেই স্বীকৃত। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক আমদানি-রপ্তানি পণ্য এই সড়ক দিয়ে পরিবহন করে জাতীয় মহাসড়কে যুক্ত হয়। এ ছাড়াও বিয়ানীবাজারের ২টি ও গোলাপগঞ্জের (কৈলাশটিলা) ৫টি গ্যাস কূপের তেল-গ্যাস প্রতিদিন বিরাট বিরাট লরি দিয়ে পরিবহন করা হয়। এই অবস্থায় মহাসড়ককে গুরত্বহীন দেখানোর বিষয়টি ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হোসেন আহমদ, বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস জেবুল ইসলাম, মো. ময়নুল ইসলাম, নূরউদ্দিন লোদী, আনোয়ারুল ইসলাম অভি, গুলজার হোসেন, ওহিদুর রহমান চৌধুরী, জামাল খান, মাহমুদুল হাসান, দিলাল আহমদ ও প্রবাসী সংগঠক সাহমুদুল হাসান।
বক্তারা বলেন, ‘সিলেট-চারখাই-শেওলা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প’ নিয়ে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে তা সিলেট জেলা প্রশাসকের সিলেট বিদ্বেষী মনোভাবের বর্হিপ্রকাশ। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি বাতিলের জন্য সিলেট জেলা প্রশাসকের দুরভিসন্ধি আমাদের বিস্মৃত করেছে। অবশ্যই এই ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। অবিলম্বে এই উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে। না হলে সর্বত্র গণ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
বক্তরা আরও বলেন, এই সড়কটি অর্থনৈতিকসমৃদ্ধ ও প্রবাসী অধ্যুষিত গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার- জকিগঞ্জ -বড়লেখা উপজেলার যোগাযোগের একমাত্র প্রধান সড়ক। প্রতিদিন হাজার হাজার পণ্যবাহী ভারী যানবাহন চলাচল করে। তার সঙ্গে গণপরিবহণ ঝুকি নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। ফলে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া, বন্যার সময় রাস্তাটি ভারতের উজানের ঢলের কারণে বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এটি চারলেনের মহাসড়কে উন্নীতকরণ ছাড়া উপায় নেই।
সভায় ষড়যন্ত্র বন্ধ করে, জরুরী ও জনগুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের কাজটি দ্রুত শুরু করার জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশন যুক্তরাজ্য এর মাধ্যমে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এছাড়াও এই লক্ষ্যে যুক্তরাজ্যে সিলেট পূবাঞ্চলের বিশেষ করে গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট,বড়লেখার প্রবাসী সামাজিক সংগঠনগুলোর সাথে মতবিনিময় করাও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
মীর্জা ইকবাল

মন্তব্য করুন: