ওসমানীনগরে ৫০ বছরের স্বপ্ন পুরণে রহিমা ফিরোজ সিকদার উচ্চ বিদ্যালয়
Post Top Ad

ওসমানীনগরে ৫০ বছরের স্বপ্ন পুরণে রহিমা ফিরোজ সিকদার উচ্চ বিদ্যালয়

মীর্জা ইকবাল

০৮/০৮/২০২৫ ১৮:০৫:০২

প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না: ফাইজ তাইয়েব আহমেদ

সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার অবহেলিত একটি গ্রামের নাম  দয়ামীর ইউনিয়নের থানাগাঁও মাঝপাড়া। প্রবাসী অধ্যুষিত এই উপজেলার মানুষ দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকলেও এই গ্রামটি ছিল শিক্ষাখাতে অনেকটা পিছিয়ে। স্বাধীনতার পর থেকে সেখানে ছিল না আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা। গ্রামবাসির চাহিদা এবং স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এলেন একজন নিভৃতচারী শিক্ষানুরাগী মানুষ শফিক উদ্দিন সিকদার। শিক্ষা আলোকে আরো প্রসারিত করতে সিলেটের ওসমানী নগর উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের থানাগাঁও মাঝপাড়া এলাকার স্বাধীনতার ৫০ বছরের স্বপ্ন পূরন করলেন এই ব্যাক্তি। যার নজির দৃষ্টান্ত রহিমা ফিরোজ সিকদার উচ্চ বিদ্যালয়।


ফিরোজ উদ্দিন সিকদার ও রহিমা সিকদারের পুত্র শফিক উদ্দিন শিকদার বিগত ৫ দশকের ও বেশী সময় যাবত যুক্তরাজ্যে স্বপরিবারে বসবাস করলেও গ্রামের মাটি মানুষ যেন তার হৃদয় জুড়ে বিচরন করে সর্বদাই। শিক্ষার প্রসারে নিজেকে নিবেদিত করতে মা রহিমা সিকদারের অবদানই বড় ভূমিকা রাখে তার জীবনে।ফিরোজ রহিমা দম্পতির ৬ পুত্র ও ২ কন্যার মাঝে শফিক উদ্দিন ২য়। আনন্দ, আশা, উজ্জ্বলতা এবং সৃজনশীলতার প্রতীক হিসেবে হলুদ রংটাকে ভীষণ পছন্দ করেন এই পরোপকারী ব্যাক্তিটি।


যখন ভাবতেন নিজ গ্রামে একটা উচ্চ বিদ্যালয় নেই, কত দূরে গিয়ে ছাত্র ছাত্রীরা ক্লাস করতে হয়। বিশেষ করে গ্রামে নারী শিক্ষা পিছিয়ে পড়ছে।এই বিষয়টা মেনে নিতে পারেন নি এই উদার মনের মানুষটি, ঠিক তখনি পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে নিজেদের বিশাল অংশের একটি জমি দিয়ে দিলেন মানবকল্যানে বিদ্যালয়ের জন্য এবং নিজ উদ্দ্যোগে এলাকাবাসিকে নিয়ে শুরু করলেন বিদ্যালয় ভবন নির্মানের কাজ। ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি এলাকাবাসীর স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ নেওয়াতে সহযোগিতা করলেন এই শিক্ষার আলোর বারতা ছড়ানোর বাহক শফিক উদ্দিন।


তিনি মনে করেন সুশিক্ষিত মানুষ সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে, কুসংস্কার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে। একটি উন্নত দেশ: একটি শিক্ষিত জাতিই পারে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল দেশ গড়তে।


এই মানবিক মানুষটির লক্ষ্য ছিলো এই পিছিয়ে পড়া গ্রামে উচ্চ বিদ্যালয়টি এমন আঙ্গিকে তৈরি করবে, যেন কোন কিছুর কমতি না থাকে। এরপরই শুরু হল সেই নান্দনিক ডিজাইনের বিদ্যালয়টি নির্মানের কাজ।কেবল মাত্র ২ বছরেই কাজ শেষ হয় কাঙ্খিত উচ্চ বিদ্যালয়ের।


প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী, ৯জন শিক্ষক, একজন অফিসসহকারীকে নিয়ে চলছে প্রাণবন্ত এই বিদ্যালয়টি।প্রতিষ্ঠানটির যাত্রালগ্ন থেকেই সকল শিক্ষার্থীর ভর্তি, বেতন, ব্যাগ, খাতা কলম এমনকি স্কুল ড্রেস দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে। এই বছর ২০২৫ইংরেজী ১ম এস এস সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে রহিমা ফিরোজ সিকদার উচ্চ বিদ্যালয়।এতে ৩৯ জনের মাঝে ২৯ জন সাফল্যের সাথে, উত্তীর্ণ হয়।


ব্যাক্তি জীবনে এই গল্পের নায়ক জীবনসঙ্গীর নাহরিন চৌধুরী অবদানও অকপটে স্বীকার করেন। ২ পুত্র ও ১ কন্যাও চলার পথের সাহস দিয়ে চলছে প্রতিনিয়ত। মানব সেবা শুধু একটি ভালো গুণ নয়, এটি মানুষের প্রতি মানুষের দায়িত্ববোধের প্রতিচ্ছবি।একটি মানুষের জীবনে প্রকৃত খুশি তখনই আসে, যখন সে নিজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে অপরের উপকারে আসে। শফিক নামটি অর্থ দয়াশীল এবং এই অর্থটিকে যেন পরিপূর্ণ করে চলে নিবেদিত প্রানের এই মানুষটি।


আসলে এরকম সাদা মনের মানুষ যদি হয় প্রতিটি এলাকায় তাহলে নিশ্চয়ই গর্বের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই আমাদের দেশ। পরিশেষে বলা মানবতা বেঁচে থাকুক মানুষ হয়ে উঠুক প্রকৃত মানুষ।

নীরব চাকলাদার

মন্তব্য করুন:

Post Bottom Ad
Sidebar Top Ad
Sidebar Botttom Ad