জকিগঞ্জে ব্যবসায়ী খুনের ঘটনায় ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ,ক্লু পায় নি পুলিশ

সিলেটের জকিগঞ্জের কালিগঞ্জ বাজারের মুদি ব্যবসায়ী নোমান উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৪৮ ঘণ্টা পার হলেও শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ জমা হয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে ধারাবাহিক জিজ্ঞাসাবাদ ও ব্যাপক তদন্ত চললেও এখনো হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন সম্ভব হয়নি। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
গত বুধবার (১ অক্টোবর) বিকেলে নিহত নোমান উদ্দিনের বাড়ির অদূরে কালিগঞ্জ বাজার এলাকার শায়লা স্মৃতি হাসপাতালের পেছনের ধানক্ষেত থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয়রা ও পরিবার সদস্যরা লাশ দেখে নিখোঁজ নোমান উদ্দিন (৫০) হিসেবে শনাক্ত করেন। তিনি মানিকপুর ইউনিয়নের পূর্ব মানিকপুর গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে। সূত্র জানায়, নিহত নোমান উদ্দিন প্রায় ২০ বছর সৌদি আরব প্রবাসে ছিলেন। গত প্রায় ২ আগে দেশে ফেরে কালিগঞ্জ বাজারে মুদি ব্যবসা শুরু করেন। প্রবাসে থাকার সুবাদে অনেক ধনসম্পত্তি করেন।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে নোমান উদ্দিন বাড়ি থেকে বের হয়ে কালিগঞ্জ বাজারে দোকান খোলে সকাল ১১টার দিকে তিনি শায়লা স্মৃতি হাসপাতালে যান এমন দাবী নিহতের শ্যালক হানিফ আহমদ সুমনের। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। ওইদিনই পরিবারের পক্ষ থেকে স্ত্রী মনোয়ারা বেগম জকিগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। অতঃপর অজ্ঞাত একটি মোবাইল নম্বর থেকে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। তবে বিষয়টি সন্দেহজনক বলে মনে করছে এলাকাবাসী।
বুধবার সন্ধ্যায় মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ থানায় নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার রাতে নিহত নোমান উদ্দিনের জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়। জানাজায় অংশগ্রহণকারী স্থানীয়রা হত্যার রহস্য উদঘাটন ও প্রকৃত আসামিদের গ্রেফতারের জোর দাবি জানান। তারা প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন, এ ঘটনার সঙ্গে নিহতের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, শ্যালক হানিফ আহমদ সুমনসহ পরিবারের কিছু সদস্য জড়িত থাকতে পারেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর থেকে নিহতের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, মেয়ে মুন্নি ও তান্নি, শ্যালক হানিফ আহমদ সুমন, চাচাতো ভাই রিয়াজ উদ্দিন, হাসপাতালের কেয়ারটেকার তেরা মিয়াসহ অন্তত ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে এখনো কোনো ক্লু মেলেনি।
এদিকে, নোমান উদ্দিন নিখোঁজ হওয়ার পর তার শ্যালক সুমন আহমদ ও বাবুর বাজার এতিছামনগর গ্রামের মাজেদ আহমদ থানায় গিয়ে অসংলগ্নভাবে কথাবার্তা বলে জিডি করেছিলেন বলে জানা গেছে। পুলিশকে ঘটনার সঠিক কোন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন নি। নোমান উদ্দিনের মরদেহ উদ্ধারের পর থানায় রাতভর অ্যাম্বুলেন্সে লাশ রাখা হলেও পরিবারের কোনো সদস্য, আত্মীয় স্বজনরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না, লাশ সারারাত পুলিশ পাহারায় ছিলো। নিহতের মেয়ে মুন্নি বেগম এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে মামলা করবেন। যাদেরকে তিনি সন্দেহ করবেন তাদেরকেই আসামি করবেন। তবে তাদেরকে কেউ সন্দেহ না করতে বলেন। যা স্থানীয়দের মনে আরও প্রশ্ন তৈরি করেছে।
এছাড়া, নোমান উদ্দিনের বাড়িতে থাকা সিসি ক্যামেরা সরিয়ে ফেলা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। লাশ পাওয়ার পর নিহতের শ্যালক মরদেহ একনজর দেখার পর ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন বলে অভিযোগ ওঠে। এসব ঘটনায় রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে।
এলাকার মানুষের অভিযোগ, ব্যবসায়ী নোমান উদ্দিনকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পরিবার সদস্য ও নিহতের শ্যালকের রহস্যজনক নানা আচরণে পুরো ঘটনাকে ঘিরে রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। পুলিশের তদন্ত চললেও স্থানীয়রা মনে করছেন, পরিবারের ভেতরের সম্পর্ক, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ ও মুক্তিপণের নাটক—সব মিলিয়ে এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে।
জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না জানান, “ঘটনার পর থেকে নিহতের স্ত্রী, সন্তান, শ্যালক ও কয়েকজন নিকটাত্মীয়সহ অন্তত ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্তে একাধিক দিক সামনে রেখে কাজ চলছে। তবে এখনো প্রকাশ করার মতো কোনো অগ্রগতি হয়নি। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, “এটিকে হত্যাকাণ্ড হিসেবেই দেখা হচ্ছে। জড়িতদের শনাক্তে পুলিশ সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে।”
নীরব চাকলাদার

মন্তব্য করুন: