লায়েছ ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
সুনামগঞ্জে স্কুলের গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ শিক্ষকের

সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার লায়েছ ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের গভর্নিং বডির উপর ব্যাপক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির অভিযোগ তোলেছেন একই স্কুলের সহকারী শিক্ষক ঝুটন মিয়া। এ ব্যাপারে তিনি একটি লিখিত অভিযোগ উপজেলা প্রশাসন বরাবরে দাখিল করেছেন। একই সাথে সহকারী শিক্ষক ঝুটন মিয়াকে কোন কারণ ছাড়াই এক টাকাও পরিশোধ না করে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টিরও দ্রুত নিস্পত্তির দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ররাবরে লিখিত অভিযোগে স্কুলের সহকারী শিক্ষক ও রৌহা গ্রামের বাসিন্দা মো. ঝুটন মিয়া জানান, তিনি ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি উক্ত প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক হিসেবে তিনি যোগদান করে টানা ১০ বছর নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু চলতি বছরের ৩০ জুন গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তে তাঁকে হঠাৎ করেই অব্যাহতি দেওয়া হয়। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হলেও কোনো বকেয়া বেতন, উৎসব ভাতা, পিএফ ফান্ড বা ইনক্রিমেন্ট পরিশোধ করা হয়নি। উপরন্তু, তাঁর নিয়োগপত্রেও কৌশলে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, লায়েছ ভূঁইয়া কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক আয় উল্লেখযোগ্য হলেও শিক্ষক-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চনার শিকার। প্রতিষ্ঠানটির গরুর হাট, একাধিক পুকুর ও শিল্পপতি-প্রতিষ্ঠানের অনুদান থাকা সত্ত্বেও নেই স্বচ্ছ আয়-ব্যয়ের হিসাব। কোনো রেজুলেশন ছাড়াই একতরফাভাবে বেতন নির্ধারণ ও বিতরণ করা হয়, যা দুর্নীতির ইঙ্গিত বহন করে।
মো. ঝুটন মিয়া অভিযোগে দাবি করেন, বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির কর্মকাণ্ডে চরম স্বেচ্ছাচারিতা রয়েছে এবং এর পেছনে রয়েছেন পুলিশের সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও আলোচিত এক হত্যা মামলার আসামি ডিআইজি আব্দুল বাতেন। তিনি গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করেন। দশ বছরের চাকরির পর বিনা নোটিশে অব্যাহতি, নেই স্বচ্ছ আয়-ব্যয়ের হিসাব। এ অভিযোগে উত্তাল শিক্ষক সমাজ।
তিনি উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করে তাঁর চাকরিচ্যুতির ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, বকেয়া বেতনের পরিশোধ এবং গভর্নিং বডি বিলুপ্ত করে গণতান্ত্রিকভাবে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির আয়ের স্বচ্ছ হিসাব প্রকাশ এবং জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন, যাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম রক্ষা পায় এবং শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা পায়।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ও গভর্নিং বডির সদস্যদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, “তিনি (ঝুটন মিয়া) টেম্পোরারি শিক্ষক। তাঁর কোনো নিয়োগ নাই, ডকুমেন্ট নাই। আছেন ক্লাস কর, যাইবাগা চলে যাও। তিনি শুধুমাত্র জুন মাসের বেতন পাওয়ার কথা, সেটা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।” এছাড়াও, তিনি শিক্ষকের আচরণ সংক্রান্ত অভিযোগের কথাও উল্লেখ করেন।
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উজ্জ্বল রায় বলেন, “এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ঘটনাটি কেন্দ্র করে এলাকায় শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলেছে। এর ফলে শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং শিক্ষক-কর্মচারীরা পেশাগত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
নীরব চাকলাদার

মন্তব্য করুন: