বাংলাদেশের ক্রান্তিকাল দীর্ঘ মেয়াদী!

১০ মাস পর মনে হচ্ছে যে, আওয়ামী লীগের ‘পতন’ শব্দটি একেবারেই বেমানান আমাদের রাজনীতিতে।কোন কিছুর “পতন” তখনই বলা যেতে পারে যখন তার আর প্রত্যাবর্তনের কোন সম্ভাবনা থাকেনা এবং সেই প্রত্যাবর্তনের বিপরীতে সীসা ঢালা কোন একটি দুর্ভেদ্য প্রাচীর সামনে থাকে। সুতরাং এই ক্ষেত্রে “বিতাড়িত” শব্দটি অধিক অর্থবোধক বলে আমি মনে করি। অন্যরা কে কি মনে করেন সেটি তাদের নিজস্ব চিন্তার ফসল।
৫ই আগস্ট শেখ হাসিনাকে বিতাড়িত করার পর দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে পরিমান বিভেদ, সংঘাত, অনৈক্য, পরিবর্তনহীনতা ও অপরিপক্কতা দৃশ্যমান হয়েছে তাতে নব্বই শতাংশ নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যায় যে, একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে এগুচ্ছে বাংলাদেশ। তার উপর ভূ-রাজনৈতিক প্রভাবে সমগ্র পরিস্থিতিকে আরেকটি অপ্রত্যাশিত রুপান্তরের দিকে নিয়ে যাবে যা খুব অল্প সংখ্যক চিন্তাশীলরা উপলব্ধি করতে পারলেও বাকিরা এ বিষয়ে একেবারে উদাসীন।
সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষন করলে কখনো মনে হবে দেশে একটি বিরাট পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। আবার কখনো মনে হবে নীতি নৈতিককতা বিবর্জিত অনুরুপ আরেকটি উগ্রবাদী, স্বার্থান্বেষী প্রজন্মের উন্মেষ ঘটেছে। সেই সাথে আরো মনে হবে যে, দুদোল্যমান একটি জাতী চেয়ে আছে আকাশের পানে কখন যে অলৌকিক সাহায্য এসে তাদের সমস্ত আশা আকাংখা পূর্ণ করে।
কথাগুলো আবেগ কিংবা হতাশা থেকে বলছি না। বরং পর্যবেক্ষন ও অভিজ্ঞতা থেকে। আবার এমন অনেক ধার্মিক বন্ধু বান্ধব, শুভাকাংখী আছেন যারা হয়তো ভবিষ্যতে ঘটিতব্য বিষয়াবলীর ধারনাকে অনর্থক ও হারাম মনে করে ফতোয়াও দিতে পারেন। আসলে ব্যাপারটি এমন নয়। তাহলে কেমন?
ব্যপারটি বুঝতে হলে আমার এক বন্ধু Ajmal Masroor এর একটি উক্তি যা তিনি বছর দেড়েক আগে আমারই নেয়া কোন একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তা একটু গভীর ভাবে চিন্তা করতে হবে। তিনি বলেছিলেন -“যারা মৃত্যু পথযাত্রী ব্যাক্তির চুড়ান্ত মুহূর্তের নিদর্শন দেখেও কোন কিছুই উপলব্ধি কর্রতে পারেনা তারা একেবারেই অবচেতন একটি সম্প্রাদয়”।
তদানুরুপ, রাজনীতিতে চলমান পরিবর্তনহীন সংস্কৃতির গতিবিধি দেখেও যদি আসন্ন সংকট অনুধাবন করা না যায় তাহলে সেক্ষেত্রে আমাদের চিন্তাধারাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আমরা ডঃ মোঃ ইউনুসকে কখনো বলছি আনাড়ি, কখনো বলছি জানু রাজনীতিবিদ, কখনো বলছি পরনির্ভরশীল, কখনো বলছি অমুক দেশের দালাল, কখনো বলছি অপরিপক্ক, আবার কখনো বলছি ষড়যন্ত্রকারী ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে আমি আমি মনে করি তিনি বহুমুখী চাপে ক্ষুব্ধ ও বিভ্রান্ত। যে কারনে দায়মুক্তির পথেই হাঁটছেন তিনি। তাহলে কী হতে যাচ্ছে?
সহজ হিসাব, চতুর্মুখী একটি ব্যবস্থাপনায় ত্রিমুখী সংঘাতের মধ্যে দ্বিমুখী অবস্থানে বহুমুখী সংকটের মধ্য দিয়ে দায়মুক্তির জন্য ভঙ্গুর একটি নির্বাচন হতে পারে বাংলাদেশে। আবার নির্বাচন না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বেশি। উভয় অবস্থাতেই বাংলাদেশের ক্রান্তিকাল দীর্ঘ মেয়াদী বলে আমি মনে করি।
সারোয়ার আলম
২১ জুন, ২০২৫
লন্ডন
মীর্জা ইকবাল

মন্তব্য করুন: