কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যাচ্ছে আসাম টাইপের বাড়িগুলো
Post Top Ad

কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যাচ্ছে আসাম টাইপের বাড়িগুলো

০২/০৬/২০২৫ ০৩:০৩:৫৫

প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না: ফাইজ তাইয়েব আহমেদ

মোটরবাইকে চড়ে উঁচু-নিচু টিলা পথ পাড়ি দিয়ে ব্যাটন বাড়িটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছি আমরা। কাছাকাছি পৌঁছে চৌধুরী বাড়ির খোঁজ করতেই পথচারী বৃদ্ধ আঙুলের ইশারায় সাদা বাড়িটির দিকে ইঙ্গিত করলেন।হাওর হাকালুকির তীর ঘেঁষে শত বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে চুন-সুরকি আর ব্যাটনে গড়া এক ঐতিহ্যিক বাস্তুভিটা।


বাড়ির ভেতরের প্রবেশদ্বারেই মাথা নিচু করে ঝুঁকে আছে একটি বাগানবিলাস। ধবধবে সাদা রঙের দেয়াল ঘেঁষে ঝুলছে থোকা থোকা লাল ফুল; এ এক আভিজাত্যের মিশেল। বৈঠকখানায় স্বাগত জানালেন বাড়ির বর্তমান সত্ত্বাধিকারী ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ চৌধুরী ও অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা দেওয়ান আশরাফি। ঐতিহ্য লালনের পরম্পরায় বাড়িতে এখন চতুর্থ পুরুষের বাস। 


বাড়িটি ঘুরে দেখাতে দেখাতে দেওয়ান আশরাফি জানালেন,বাড়িটি নির্মাণ করেছেন আব্দুল গণি চৌধুরী। এটি গণি মিয়া চৌধুরীর বাড়ি নামেই পরিচিত। কথিত আছে সিলেটের প্রভাবশালী জমিদার আলী আমজদ খানও এখানে প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি আব্দুল গণি চৌধুরীর কারণে। পালকি রাখার জন্য আব্দুল গণি চৌধুরীর কাছে জায়গা চেয়েও তা পাননি আলী আমজদ।


বাড়ির সৌন্দর্যে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে বাহারি ফুল ও ফলের গাছ।পুরো বাড়িটিতে অদ্ভুত ছাতা মেলে ধরেছে বেশ কয়েকটি বয়সী লিচু গাছ। গাছগুলোর বয়স নাকি প্রায় দু'শ বছর! এই অঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন লিচু গাছটিও রয়েছে এখানেই। প্রাকৃতিক পরিবেশ থাকায় ভোর হতেই নানারকম পাখির কলকাকলীতে মুখর হয়ে ওঠে বাড়িটি। শাহনেওয়াজ চৌধুরী বললেন,"হাওর লাগোয়া হওয়াতে শীতে এখানে পরিযায়ী পাখিরাও আসে।আমরা নিজেরা কখনোই পাখিকে বিরক্ত করি না।কোনো শিকারীও এই গ্রামে প্রবেশ করতে দেই না।আবার এ বাড়িতে কোনো যৌতুক দেওয়া নেয়ারও  নিয়ম কিন্তু নেই।" 


চুন সুরকির আস্তরণ, খোলা বারান্দার সিলিং এ বাঁশের নানা রকম দেশজ নকশা,গরাদের জানালা,টিনের চালা আর কালো রঙের ব্যাটন। সাদামাটা বাড়িটিও যেন অদ্ভুত সৌন্দর্য নিয়ে বছরের পর বছর টিকে আছে।


তবে কালের পরিক্রমায় আসাম টাইপের এই বাড়িগুলো হারাচ্ছে- একথা মানতেই হয়। নতুন বাড়ি নির্মাণের তাগিদে ভেঙে ফেলা হচ্ছে শত বছরের ঐতিহ্যিক নির্মাণ। শাহনেওয়াজ চৌধুরী ও দেওয়ান আশরাফি দম্পতি জানান,সামর্থ্য থাকলেও এ বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি করার কোনো পরিকল্পনা তাঁদের নেই। তাঁদের ছেলে মেয়েরাও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রয়োজনীয় সংস্কার করে বাড়িটি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে রেখে যেতে চান স্থাপত্য ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে।


(লেখাটি দ্যা সিলটিজ গ্রুপ থেকে সংগৃহিত)


নীরব চাকলাদার

মন্তব্য করুন:

Post Bottom Ad
Sidebar Top Ad
Sidebar Botttom Ad