ঈদের স্মৃতিচারণ
“মিয়া, একবার হজে যাও,বয়স তো কম হলো না’

প্রয়াত জননেতা দেওয়ান ফরিদ গাজী—নাম উচ্চারণ করলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে রাজনীতির এক মমতাময় অভিভাবকচরিত্র। দেশে থাকতে ঈদের দিনে তাঁর বাসা ছিল আমাদের মতো অনেকের অবধারিত গন্তব্য। জননেতা আব্দুল হামিদের বাড়িতেও গিয়েছি বহু ঈদের রাজনৈতিক জনসংযোগে।
তখন আমরা স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ব্যস্ত। জোটবদ্ধ রাজনীতি, মিছিল, সভা—আর তার সঙ্গে চিরকালীন সঙ্গী তহবিল সংগ্রহের দায়। আমার নেতা তখন ম আ মুকতাদির। তাঁর ছায়ায় দৌড়ঝাঁপ করছি। তখনকার দিনে রাজনৈতিক চাঁদা মানে বড়জোর ১০০–২০০ টাকা।
কিন্তু এবার ব্যাপারটা বড়সড়—সর্বদলীয় জনসভা, যার জন্য চাই বড় অঙ্কের টাকা। গাজী সাহেব, হামিদ চাচা, আরও কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা মাঠে নামলেন। আমরা গেলাম শহরের পরিচিত গরুর হাটের ইজারা অফিসে। সেই হাটের ইজারাদার এক পরিচিত ব্যবসায়ী—সোজাসাপ্টা লোক। হামিদ চাচা আর খোদ গাজী সাহেব সামনে। সাহস করে আমরাও ঢুকে পড়লাম।
ব্যবসায়ীর আচরণ দেখে চমকে উঠার পালা —তিনি নিজে চেয়ার ছেড়ে দিলেন গাজী সাহেবকে, হামিদ চাচার জন্য ভেতরে রাখা বড় সাইজের চেয়ার নিজে নিয়ে আসলেন।সাথে পানের বাটা। আপ্যায়নে কোনো ঘাটতি রাখলেন না। রাজনীতিবিদদের প্রতি এমন শ্রদ্ধা, ভক্তি আজও কি করেন ব্যবসায়ীরা? সবশেষে তিনি পাঁচ হাজার টাকা তুলে দিলেন আমাদের হাতে। আমি রীতিমতো হতবাক। চেক দিয়ে বিদায় নিতে যাবো, এমন সময় গাজী সাহেব হঠাৎ অভিভাবকের সুরে বললেন:
— “ - মিয়া, একবার হজে যাও। বয়স তো কম হলো না!” হালকা হাসি ফুটে উঠল ব্যবসায়ীর মুখে। বললেন:— “গাজী সাব, কিলা যাইতাম? হজ আর কোরবানি এক লগে পড়ি যায় হক্কল বছর। হজে গেলে গরুর বাজার সামলাইবো কে?” হো হো করে হেসে উঠলেন গাজী সাহেব আর হামিদ চাচা।
শহরের তিন বিশিষ্টজন - হামিদ চাচা,গাজী সাহেব আর মকন মিয়ার সেই কৌতুকময় আচরণ আজও মনে পড়লে হাসি পায়।
কোরবানির ঈদ এলেই মনে পড়ে সেই দিনটির কথা। জানি না, সেই ব্যবসায়ী জীবদ্দশায় পুণ্যভ্রমণে যেতে পেরেছিলেন কি না।
তবে আমাদের প্রতি যে শ্রদ্ধা আর উদারতা তিনি দেখিয়েছিলেন, তা মনে রেখেছি। ঈদের দিনটিতে স্মরণ করছি গল্পে বর্ণিত লোকজনকে।
নোট : (লেখাটি লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে সংগৃহিত)
লেখক : ইব্রাহিম চৌধুরী
সম্পাদক ; প্রথম আলো
উত্তর আমেরিকা
নীরব চাকলাদার

মন্তব্য করুন: