প্রসঙ্গ : সিলেটের চৌধুরী সমাজ
Post Top Ad

প্রসঙ্গ : সিলেটের চৌধুরী সমাজ

০৫/০৭/২০২৫ ১৪:০২:৫৪

প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না: ফাইজ তাইয়েব আহমেদ

সিলেটের চৌধুরীরা ছিলেন প্রভাবশালী গ্রামীণ অভিজাত, যারা মুঘল এবং পরে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময় ভূমি রাজস্ব ও সামাজিক কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থ হিসাবে উত্থান লাভ করেন। স্থানীয় নেতৃত্ব ও ভূমি রাজস্ব সংগ্রহের দায়িত্ব দিয়ে যাদের নিয়োগ করা হতো, তাদের মধ্যে চৌধুরী উপাধি ধীরে ধীরে ১৮শ শতকের শেষভাগ থেকে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে প্রভাব, জমির মালিকানা ও কর্তৃত্বের প্রতীক হয়ে ওঠে।


ব্রিটিশ শাসনামলে (১৭৫৭–১৯৪৭) এই উপাধি আনুষ্ঠানিক রূপ পায় এবং অনেকাংশে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হতে থাকে। 

চৌধুরীরা সবসময় পুরোপুরি জমিদার না হলেও, অনেকেই কার্যত জমিদারের মতো ভূমিকা পালন করতেন— বিস্তৃত জমির ব্যবস্থাপনা, চাষাবাদের দেখভাল, এবং স্থানীয় বিরোধ নিষ্পত্তি করতেন। তাদের পরিবার ও বাড়ি ছিল স্থানীয় ক্ষমতা, অর্থনীতি এবং সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু।


তারা নিম্নোক্ত শ্রেণির সাথে জটিল সম্পর্ক বজায় রাখতেন: • রাইয়ত – কৃষক শ্রেণি, যারা ভাড়া প্রদান করতেন ও জমি চাষ করতেন। • কিরাণ– চৌধুরী পরিবারের উপর নির্ভরশীল, যারা তাদের জমিতে বা বাড়িতে শ্রম দিতেন। • মৌসুমি শ্রমিক – বিশেষ করে নারী শ্রমিক, যারা ফসল কাটার সময়, খাবার প্রস্তুত ও সংরক্ষণের কাজে সাহায্য করতেন।


চৌধুরীরা গ্রামের শৃঙ্খলার অভিভাবক হিসেবে ভূমিকা পালন করতেন। তারা প্রায়ই মসজিদ, বিদ্যালয়, রাস্তা নির্মাণে অর্থ সাহায্য করতেন, কিন্তু একই সাথে সমাজে ওঠানামা এবং জমির ব্যবহারেও কঠোর নিয়ন্ত্রণ রাখতেন। কেউ কেউ ন্যায়পরায়ণ ও দানশীল হিসেবে পরিচিত ছিলেন, আবার কেউ কেউ ঔপনিবেশিক প্রশাসকদের সহযোগী শোষক হিসেবেও সমালোচিত হতেন।

ক্ষেত-খামারে ও কায়িক পরিশ্রমের কাজ না করার কারণে এবং অর্থনৈতিক স্বচ্ছতার জন‍্যে ও  চৌধুরী পরিবারের সদস্যদের হাতে অনেক সময় থাকার কারণে অনেকেই শিক্ষা- সংস্কৃতির কাজে মনোযোগ দিয়ে বিশেষ সামাজিক এ‍্যলিট বা অভিজাত হিসেবে নিজেদের স্থান করে নেন ।


শিক্ষা- সংস্কৃতিতে এগিয়ে থাকার এই ধারাবাহিকতা এখনো বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের বাহিরে সিলেটের চৌধুরী পরিবারের সদস্যদের মধ্যে লক্ষণীয়।


ভারতের বিভাজন (১৯৪৭) এবং পূর্ববঙ্গ ও আসামে ভূমি সংস্কার আইন ধীরে ধীরে তাদের সামন্ততান্ত্রিক বিশেষাধিকার বিলুপ্ত করে। 

তবে অনেক চৌধুরী বংশধর নিজেদের নতুনভাবে গড়ে তোলেন— কেউ রাজনীতিতে, কেউ পেশাজীবী হিসেবে, আবার কেউ বিদেশে পাড়ি দেন। তবুও “চৌধুরী” নামটি এখনও সিলেট অঞ্চলের সম্মান, জমির মালিকানা ঐতিহ্য এবং গ্রামীণ নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে গণ‍্য হয় ।

নীরব চাকলাদার

মন্তব্য করুন:

Post Bottom Ad
Sidebar Top Ad
Sidebar Botttom Ad