কপিল কল‍্যান চৌধুরীর লেখা থেকে সিলেটের কিছু কথা
Post Top Ad

কপিল কল‍্যান চৌধুরীর লেখা থেকে সিলেটের কিছু কথা

২৬/০৫/২০২৫ ০৮:৩৪:০০

প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না: ফাইজ তাইয়েব আহমেদ

শ্রীহট্টের আক্ষরিক অর্থ হলো 'ঐশ্বর্য্যপূর্ণ হাট' (সংস্কৃত হট্ট) বা ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থান । সনাতনশাস্ত্র অনুসারে শিবের স্ত্রী সতী দেবীর কাটা হস্ত (হাত) এই অঞ্চলে পড়েছিল, যাঁর ফলে 'শ্রী হস্ত' হতে শ্রীহট্ট নামের উৎপত্তি বলে সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ বিশ্বাস করেন । ‘শক্তিসঙ্গম-তন্ত্র’ গ্রন্থে ‘শিলহট্ট’ শব্দটি উল্লেখ আছে । যোগিনীতন্ত্র, বৃহন্নলীতন্ত্র এবং দেবীপুরাণে শ্রীহট্টের উল্লেখ আছে প্রধানত শাক্ত ধর্মের পীঠস্থান হিসেবে । 


তৎকালীণ গৌড় (শ্রীহট্ট) রাজাদের কর্তৃক পূজিত শ্রীহাটকেশ্বরই শ্রীহট্ট নামের উৎস বলে অনেকে মনে করেন । কামাখ্যাতন্ত্র অনুযায়ী প্রাচীন অসমের কামরুপ রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমানাই প্রাচীন শ্রীহট্ট ছিল, অর্থাৎ শ্রীহট্ট ছিল কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত ।

আড়াই হাজার বছর আগে গান্ধার রাজ্যের পাঞ্জাবের তক্ষশীলা (অধুনা, দেশভাগে রাওয়ালপিন্ডি, পাকিস্তান) বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পাণিনি’র पाणिनि লেখা 'অষ্টাধ্যায়ী’ নামের গ্রন্থটিতে তিনি সিলেট অঞ্চলকে ‘সুররমাস’ অঞ্চল হিসেবে সুরমা নদী তীরবর্তী জনপদ, অর্থাৎ সিলেটকে চিহ্নিত করেছেন । 


চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ 玄奘 এই অঞ্চল ভ্রমণ করেন ৬৪০ খ্রিস্টাব্দে, তিনি তাঁর ভ্রমণ কাহিনীতে এ অঞ্চলের নাম 'শিলিচতল' উল্লেখ করেছেন ।


পারস্যের বিখ্যাত জ্ঞানী আল-বেরুনী ابوریحان محمد بن احمد بیرونی ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দে সিলেট আসেন । তার বিখ্যাত ‘কিতাবুল হিন্দ’ গ্রন্থে  তিনি ‘শিলাহাত’ রাজ্যের নাম উল্লেখ  করেছেন । তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী দ্বারা বঙ্গবিজয়ের মধ্য দিয়ে এদেশে মুসলিম সমাজব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটলে মুসলিম শাসকগণ তাঁদের দলিলপত্রে "শ্রীহট্ট" নামের পরিবর্তে 'সিলাহেট', 'সিলহেট', ছিলহেট্' ইত্যাদি নাম লিখেছেন বলে ইতিহাসে অকাট্য প্রমাণ মিলে । হজরত শাহ্ জলাল شاه جلال ইয়ামেনী (র.) এর কাহিনী অনুসারে, তিনি সঙ্গীসমেত সিলেট প্রবেশ পথে একটি বৃহৎ কদাকার পাথর (শিলা) দেখতে পান, যা না সরিয়ে সিলেটে প্রবেশ দুষ্কর । সঙ্গীরা অনেক চেষ্টা করেও পাথর সরাতে পারে নি, তখন তিনি বলেছিলেন 'শিলা হট্' অর্থাৎ পাথর সরে যাও । সেই শিলা হট্ থেকেই ছিলহেট্ তারও পরে সিলেট । 


বৃটিশ ভারতবর্ষেরও পূর্বে কোম্পানী আমলের পুরনো কাগজপত্র কিংবা দলিল দস্তাবেজে বাঙলায় শ্রীহট্ট হিসেবে লেখা হলেও ভারতের সরকারি নথিপত্রে যেমন আসাম গেজেটিয়ারে (Assam District Gazetteers) বা অন্যত্র শ্রীহট্টকে ইংরেজিতে প্রথম ‘সিলহেট’ (Sylhet) হিসেবে উদ্ধৃত হতে দেখা যায় । অ্যাংরেজ আমলের প্রথম দিকে কাগজপত্রে SILHET লেখা হতো । পরে SILCHAR থেকে পার্থক্য দেখাবার জন্যে SYLHET উল্লেখ হতে থাকে ।


বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখায়ও সিলেটের নাম আসে । যোগাযোগ উপন্যাসে- 'ইটের পাঁজা পোড়ালে বিস্তর, নেপাল থেকে এল বড় বড় শালকাঠ, সিলেট থেকে চুন, কলকাতা থেকে মালগাড়ী বোঝাই করোগেটেড লোহা'। শেষের কবিতায় 'তাই ও যখন ভাবছে, পালাই পাহাড় বেয়ে নেমে গিয়ে পায়ে হেঁটে সিলেট-শিলচরের ভিতর দিয়ে যেখানে খুশি এমন সময়ে আষাঢ় এল পাহাড়ে পাহাড়ে বনে বনে তার সজল ঘনছায়ার চাঁদর লুটিয়ে'।। শ্রীহট্ট > শিলা হট্ > ছিল্ হট্ > সিলেট


মমতাবিহীন কালস্রোতে

বাংলার রাষ্ট্রসীমা হ'তে

নির্বাসিতা তুমি

প্রথম ডেস্ক :

মন্তব্য করুন:

Post Bottom Ad
Sidebar Top Ad
Sidebar Botttom Ad