প্রতিক্রিয়ায় নগরনাট
নাটক কম কর পিও

সিলেটের নাট্যাঙ্গণে একটি শক্তিশালী অবস্থান নগরনাট’র। দুর্যোগ-দুর্বিপাক,অনিয়ম-অবিচারসহ রাষ্ট্রীয় শোষন ব্যবস্থার বিপরীতে মাঠে-ময়দানে গর্জে উঠা এক তরবারি ‘নগরনাট’ সিলেট। সামাজিক কার্যক্রম ও মানবিক ইস্যুতেও মাঠে-ময়দানে নিজেদের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে সিলেটের সংস্কৃতি অঙ্গণে বারবার দাপট দেখিয়েছে এই সংগঠন। এই যাত্রায় হুমকী ছিল, ছিল ভয়-ভীতি আর রক্তচক্ষু। ছিল শাসকশ্রেণীর গর্জন। তবুও পা-চাটা দালাল না হয়ে দেশ এবং দেশের মানুষের জয়যাত্রার ধ্বণি ছিল সংগঠনের মূল লক্ষ্য। কিন্তু দিবালোকের মতো সিলেটে বিষয়টি স্পষ্ট হলেও তাতে মন ভরেনি সম্মিলিত নাট্য পরিষদের। ‘নগরনাট’র কার্যক্রম নেই-এমন অভিযোগ সংগঠনের কর্তা ব্যক্তিদের। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিজের পেইজবুক পোস্টে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন নগরনাট এর অরূপ বাউল। রবিবার তিনি নিজের ফেসবুকে এ বিষয়ে একটি লেখা পোস্ট করেন। পাঠকদের জন্য সেই পোস্ট হুবুহু তোলে ধরা হল।
অরূপ বাউল
এসি লাগানো হল আর নরম গদিওয়ালা চেয়ার বেস্টিত প্রসেনিয়াম মঞ্চে উঠে কয়েকটি মুখস্ত সংলাপ আওড়ালেই হবে- এতে শিল্প না থাকুক, ক্ষমতাকে প্রশ্ন করার সাহস না থাকুক, বরং তা ভাঁড়ামো আর ক্ষমতার অশ্লীল তোষামোদির প্রদর্শনী হয়ে উঠুক; নাটককে সাধারণ মানুষ থেকে যতই দূরে সরিয়ে নেয়া হোক- তাতেও আপত্তি নেই, বরং এরকম কর্পোরেট নাটক বছরে ২টা হলেই চলবে। এমনই তো মনে করেন আমার সিলেটের নাট্যজনেরা। অথচ এই নাট্য পরিষদ তৈরী হয়েছিলো, একটা সুনির্দিষ্ট নাট্য আন্দোলনের লক্ষ্যে, যা কেবল সংবিধান নামক গ্রন্থেই রয়ে গেল।
এই তো কয়দিন আগে, ঝাড়খণ্ডতে দেখলাম- গাছের উপরে নাট্যদলের পারফরমাররা, আর দর্শক রাস্তায়। গাছটাই হয়ে গেছে নাটকের মঞ্চ। আবার দেখলাম, বাসের ভিতরে একটা নাট্যদল নাটক করছে, বাসের যাত্রীরা হয়ে গেছেন দর্শক, বাসটাই হয়ে গেছে মঞ্চ। পরিবেশন থিয়েটার বা পথ নাটকের কথা আর নাই বললাম।
যেখানেই আমি নাটক করবো, সেটাই আমার মঞ্চ। হোক সেটা আমার ড্রইংরুমে বা আপনার বাসার ছাদে। এই যে আমার মাথামোটা গুরুজনেরা, তারা নাটক বলতে কি বুঝেন কিংবা নাট্য আন্দোলন বলতেই কি বুঝেন আমার মাথায় আসে না। কে তাদের বুঝাবে, নাট্য আন্দোলন কেবল মঞ্চে নাটক নয়—এটা এক ধরনের সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ বা সাংস্কৃতিক আন্দোলন, যা যেকোন ধরনের নাটকের মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তন আনার লক্ষ্য নিয়ে গঠিত ও পরিচালিত হয়। এটি শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য নয়, বরং সমাজ সচেতনতা, প্রতিবাদ, রাজনৈতিক মতাদর্শ, মানবিক মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক জাগরণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
আমরা নগরনাট সারা বছর, নানান ধরনের কার্যক্রম নিয়ে রাস্তায় নামি নানা ধরণের হুমকি-ধামকি-হয়রানি উপেক্ষা করে। হোক সেটা দেশের সংকট কিংবা মানবতার। হোক সেটা প্রাণ, প্রকৃতি বা পরিবেশের। অথচ নাট্য পরিষদের অভিযোগ, আমাদের নাকি কার্যক্রম নেই। সারাবছর চুপ থেকে, এসি লাগানো হলরুমের মঞ্চে বছরে ২টা শো আর টিকিট পুশিং সেল করে দর্শক নিয়ে এসে, নাটক মঞ্চায়ন করাটাই নাকি থিয়েটার! এইটাই নাকি কার্যক্রম! কি হাস্যকর!
এইসব ভাঁড়ামো, জনবিচ্ছিন্নতা, তেলবাজিই যদি নাটক হয়, তাহলে তো বলতেই হয়- 'নাটক কম কর পিও'।
নীরব চাকলাদার

মন্তব্য করুন: