পাঠ প্রতিক্রিয়া : ‘এক জীবনের গান’
Post Top Ad

পাঠ প্রতিক্রিয়া : ‘এক জীবনের গান’

৩১/০৫/২০২৫ ১২:৩৭:৪৪

প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না: ফাইজ তাইয়েব আহমেদ

ফেইস বুকের বরাতে  সিলেটে একটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসবের খবর পেলাম।দেখলাম কবি কালাম আজাদ বইটির খুব প্রশংসা করেছেন। বইটি র নাম এক জীবনের গান। আমার প্র‍য়াত বন্ধু মহিউদ্দিন শীরু কোন ভাল বই প্রকাশিত হলেই বলার অপেক্ষা না করেই পাঠিয়ে দিতেন।কত লোকের সাথে যে বই পাঠিয়েছেন তার হিসাব নেই। কেউ সাথে করে এনেছেন কেউ আনেন নি। এখন ভরসা বন্ধু মীর লিয়াকত ও স্নেহাষ্পদ সেলিম আউয়াল। সময়ে অসময়ে বই বিষয়ে তাদের বিরক্ত করে তুলি।


বই মেলা চলছে। প্রচন্ড চাপ যাচ্ছে,দারুন ব্যস্ততা  সকলের। মীর লিয়াকতের একসাথে অনেকগুলো বই বেরুচ্ছে। ফোন করলে তিনি ফোন ধরেন না। টেক্সট করে জবাব দেন পরে ফোন করছি , বই মেলা চলছে । ফোন করেন না।আমিও টেক্সট করে বলি ড: সালেহ হোসেন এর এক জীবনের গান বইটি চাই। কাজ হলো, সাথে সাথে ফোন করে জানতে চান, বইটি কি মেলায় আছে এবং কোন স্টলে আছে? বলি বাবুই স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। একটু পরেই বাবুইর মালিকের সাথে বইসহ একটি ছবি পাঠালেন। বললেন বই কেনা হয়েছে মেলা শেষে পাঠাবেন। 


অবশেষে ডাক যোগে বই খানি হাতে এলো এপ্রিলের মাঝামাঝিতে। ডাক খরচ দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ। বাইশ শত ৩৭ টাকা! 

ঢাউশ একখানা বই। ৬৪৭ পৃষ্ঠার একটি জীবনীগ্রন্থ। ইতিমধ্যে বাংলাদেশি বেশ কয়েকজন বড় মাপের পন্ডিত ব্যক্তিদের জীবনীগ্রন্থ পড়ে হতাশ হয়েছি। এদের অনেকেই সত্যের মুখোমুখি হোন নি। মনের মাধুরী মিশিয়ে যা লিখেছেন,তা জীবনীগ্রন্থ না হয়ে উপন্যাস হয়েছে। পাঠকদের বোকা বানিয়েছেন। নানা ছলে নিজেদের মহা মানব করে তোলার চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। অনেক্ষেত্রে হাস্যরসের পাত্র হয়েছেন। তাই কিছুটা সতর্কতার সাথে পড়তে শুরু করলাম।


এক জীবনের গান পড়তে গিয়ে একটি বারের জন্যও মনে হয়নি লেখক পাঠকের সাথে প্রতারণা করছেন,বানিয়ে গল্প লিখেছেন। মনে হয়েছে  তাঁকে আমিও চিনি এর সাথে আমার চারপাশের সাদৃশ্য খুঁজে পাই। সাধারন বাঙ্গালী পরিবারে বেড়ে ওঠা জীবনের অভাব অনটন পাওয়া না পাওয়ার গল্প,আশা আকাংখার গল্প। কি অকপটে লিখে গেছেন একটি সাধারণ পরিবারে বেড়ে ওঠা লেখক ও তার পরিবারের সংশ্লেষ।কোথাও কোন ভনিতা নেই, আহামরি নেই। কোথাও নিজেকে অন্যের চেয়ে আলাদা করার চেষ্টা নেই।


আটটি অধ্যায়ে বিভক্ত গ্রন্থখানিতে রয়েছে শৈশবের দিনগুলি,কিশোরবেলা,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি,কর্মজীবন,নাইজেরিয়া যাত্রা,সংসারপর্ব,কানাডা স্মৃতি এবং আমার পথচলা। প্রতিটি অধ্যায়ে রয়েছে লেখকের পরিশ্রমের/ কষ্টেসৃষ্টে এগিয়ে যাওয়ার বর্ণনা। সাধারণ মধ্যবিত্ত পারিবারের বিবরণ। পাঠক পড়তে গিয়ে মনে করবেন নিজেদের চারপাশের কথাই যেন পড়ছেন।বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত/ নিম্ন মধ্যবিত্ত  পারিবার থেকে উঠে আসা  মানুষের  জীবন জয়ের কথা।পরতে পরতে রয়েছে সেই বর্নণার ছবি আঁকা। দৃঢ় সংকল্প আর আত্মবিশ্বাস ই ছিল তাঁর সাফল্যের চাবী। অজপাড়াগাঁয়ে জন্ম নেওয়া বাবার শাসনে বড় হওয়া আর মায়ের নেওটা ছেলেটি কোথা থেকে,কোথায় কি করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন তা পড়ে শুধু অবাক নয় উচ্ছ্বায়ী হতেও ইচ্ছে হবে।কি অধম্য মনোবল আর চরিত্রের দৃঢ়তা! 


বইটি পড়তে পড়তে মনে হয়েছে এই বইটি আমাদের প্রতিটি কিশোর কিশোরীদের পড়া উচিৎ।  বিনা মূল্যে প্রতিটি লাইব্রেরিতে রাখা হোক। আমাদের সমাজ জীবনে বই পড়া উৎসব নেই। যেখানে সকলে মিলে বই ক্লাবের বই পড়বেন তারপর মতামত রাখবেন।দল বেঁধে বই পড়াও আর নেই। বই নিয়ে কাড়াকাড়িও নেই। ভাল বই এগিয়ে দেওয়ার মতো আমাদের একজন নূরুল হকও নেই। 


সালেহ আহমেদ এর অনুলিখনে বইটি সুখপাঠ্য হয়ে উঠেছে। ভাষা প্রাঞ্জল।একবার পড়তে বসলে শেষ করার তাগিদ এড়াতে পারবেন না। বইটির প্রচার হোক।  কবি কালাম আজাদ,ড. সালেহ হোসেন, সালেহ আহমেদ ও বন্ধু মীর লিয়াকত কে অনেক ধন্যবাদ।


লেখক : যুক্তরাজ্য প্রবাসী, 

নীরব চাকলাদার

মন্তব্য করুন:

Post Bottom Ad
Sidebar Top Ad
Sidebar Botttom Ad